পত্নীতলায় গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ, বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ স্বামী

নওগাঁর পত্নীতলায় উপজেলায় ঘরের মধ্যে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টি (২২) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ওই গৃহবধূকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তাঁর স্বামী।

চিকিৎসক বলছেন, তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁর শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। পুড়ে গেছে শরীরের ৬৫ শতাংশ। গত (২১ সেপ্টেম্বর) বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে উপজেলার আমদাদপুর কমলাবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। অগ্নিদগ্ধে আহত ওই গৃহবধূর স্বামী রিপন মিয়া (২৪) বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

অগ্নিদগ্ধ দম্পতির স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে প্রথমে গৃহবধূ হালিমার শরীরে আগুন ধর। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্বামী রিপন দগ্ধ হন।

আরো পড়ুন :
বিধবার প্রেমে বাপ ছেলে দেওয়ানা, অতঃপর থানায় অভিযোগ 

তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে তাঁরা দগ্ধ হতে পারেন।

পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, রাত ১১টার দিকে ওই দম্পতিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। অগ্নিদগ্ধ রোগীর মধ্যে নারী রোগী (হালিমা) শরীরের ৮০ শতাংশের ওপরে পুড়ে গেছে এবং পুরুষ রোগী (রিপন) এর প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনেরই শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। আমরা তাঁদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তৎক্ষণাৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করে দেই।

আজ দুপুর ২টার দিকে অগ্নিদগ্ধ রিপনের ফুফাতো ভাই শাহিনুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, রামেক হাসপাতাল থেকে হালিমাকে ঢাকা নেওয়ার পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী-নাটোর সড়কের বানেশ্বর নামক এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। রিপনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরেও কিছু সময় পর্যন্ত রিপন কথা বলতে পারছিলেন।

ওই সময় তাঁর ভাই জানান, ঘরে আগুন ধরার সময় তাঁরা জেগেছিলেন। রাত ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এ সময় ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে থেকে কে বা কাহারা তাঁর শরীরে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরে দেয়। তখন রিপন স্ত্রীর শরীরের আগুন নেভাতে গেলে তাঁর শরীরেও আগুন ধরে যায়। পরে তাঁদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাঁদেকে উদ্ধার করে পত্নীতলা হাসপাতালে ভর্তি করান। শত্রুতাবশত কেউ এটা করে থাকতে পারে। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাঁদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আরো পড়ুন :
নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে বিকেলে দেশ ছাড়ছে টাইগাররা

এ ব্যাপারে পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুল আলম বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে। এটা নাশকতা কর্মকাণ্ড, দুর্ঘটনা না আত্মহত্যার চেষ্টা তার সত্যতা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ভিকটিমের বক্তব্য অনুযায়ী বাইরে থেকে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন দেওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাতে তাঁরা দগ্ধ হতে পারেন।

আবার প্রতিবেশিরা বলছেন, পারিবারিক কলহের জেরে ওই গৃহবধূ প্রথমে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্বামীও দগ্ধ হন। প্রতিবেশিদের বক্তব্য অনুযায়ী এটা আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনাও হতে পারে।

নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দিন বলেন, অগ্নিদগ্ধ রিপনের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কোন মিল পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই ঘটনাটিকে আমাদের কাছে নাশকতা কর্মকাণ্ড বলে মনে হয়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে তাঁরা দগ্ধ হতে পারেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।

সেপ্টেম্বর ২২,২০২২ at ১৬:৫৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /সজর /শই