পাবনা জেলা বিএনপি আবারও আহ্বায়ক কমিটি, ত্যাগিনেতাদের বাদ দেওয়ায় তৃনমূলে অসন্তোষ

পাবনা বিএনপির পরপর তিনবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলে আড়াই বছর। সে কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হাবিবুর রহমান।

তাদের উপর দ্বায়ীত্ব ছিলো পাবনা জেলার সকল উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে নতুন করে কমিটি গঠন করে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জিবিত করা। কিন্তু নেতা-কর্মীদের অভিযোগ কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নাই সেই কমিটি। এ কমিটি ভেঙে গত এপ্রিল মাসে ৬ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে আবারও ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দীর্ঘ জটিলতার পর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এ কমিটির তালিকা গত ২২ আগস্ট পাবনায় পৌঁছে। এই কারণে বিএনপির অধিকাংশ নেতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ-বিভেদ দেখা দিয়েছে। অনেক নেতা কর্মী রাজনীতি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। মূলত নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন :
ভোলার চরফ্যাশনে হাঁসে কালো ডিম পাড়া নিয়ে চাঞ্চল্য

২০১৯ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছে আড়াই বছর। এ সময়ের মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। মাত্র এক বছরের মাথায় নবগঠিত ৯টি কমিটিই আবার বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি।

গত ১১ সেপ্টেম্বর নতুন আহ্বায়ক কমিটির প্রথম নির্বাহী সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে দলে আরও তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।

পাবনা জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক ও সাবেক সহসভাপতি মাসুদ খন্দকারকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলের তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে।

জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়।সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মেজর অব কেএস মাহমুদ হাবিবুর রহমান তোতা।সবাইকে নিয়ে কমিটি হওয়ায় সকল গ্রুপের অবসান হয়।মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব আহ্বায়ক ও সিদ্দিকুর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল ৯০ দিনের মধ্যে জেলার ৯ উপজেলা ও ৯ পৌরসভার ১৮টি নতুন কমিটি গঠন করা।

আরো পড়ুন :
ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘীরে শিক্ষককে মারপিটের অভিযোগ

নেতা-কর্মীরা জানান, তখনকার আহ্বায়ক কমিটি সে সময় জেলার ১৮ কমিটির মধ্যে নতুন ৯টি গঠন করে। এই কমিটি তখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। উপরোন্ত দুই/ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ স্বজনপ্রিতি ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদদিয়ে গঠন করা হয়েছে কমিটি। এতে থেমে যায় কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া। এরপর প্রায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করে তিন মাসের জন্য গঠন করা এ আহ্বায়ক কমিটি। নানা অভিযোগ উঠতে থাকে কমিটির বিরুদ্ধে।

গত এপ্রিল মাসে ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে ৬ সদস্যের ছোট নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এবার আবার ৬ সদস্যের কমিটি ভেঙে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলো। নবগঠিত এ কমিটিতে অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুস সামাদ খান, আনিসুল হক, শেখ তুহিন ও নূর মোহাম্মদ মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।

এ দিকে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই অসন্তোষ শুরু হয়েছে দলের সর্বত্র। সবাই অভিযোগ করছে ত্যাগিনেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে,যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে,তার বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক মামলা হয়নি, কখনও সে রাজপথে কোন আন্দোলনে ছিলেন না এবং এই আহবায়ক কমিটিতে যাদের সদস্য করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে ছিলেন না।

জেলার ঈশ্বরদী ইপিজেড এলাকায় স্থানীয় বিএনপির এক সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার। তিনি বলেন, যাঁরা কখনোই বিএনপি করেননি। তাঁরাই আজ বিএনপির নেতা। তাঁরা কখনো কোনো আন্দোলন সংগ্রাম করেননি। যাকে আহবায়ক করা হয়েছে, সেই হাবিব কখনও বিএনপির আদর্শ মেনে চলে না, সে আওয়ামীলীগের দালাল হিসাবে পরিচিত আছে, তার জন্য ঈশ্বরদী আটঘরিয়ার ৮০% ভাগ নেতা কর্মীরা বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দারিয়েছে। আর যাকে সদস্য সচিব করেছে, সে কখনও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে দেখা যায়নি, এমনকি তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কোন মামলা নাই। ১/১১ সময় এই মাসুদ খন্দকার কিংস পাটির সাথে যোগাযোগ করে সরকারী কৌশলীর হওয়ার আবেদন করেছিলেন।

আরো পড়ুন :
এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, আটক ৩

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ন- সম্পাদক মোসাবি্বর হোসেন সনজু বলেন, একজন ব্যর্থ নেতাকে নিয়ে জেলা বিএনপিতে বারবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গত তিন বছরে তিনি বিএনপির জন্য কিছুই করতে পারেননি। দল গোছানোর পরিবর্তে বিএনপিকে দু-তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। আবারও তাঁকেই আহ্বায়ক করা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে। এছাড়াও যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে, সে কখনও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকেন নাই। তার রিকসায় যাওয়ার মতো একজন কর্মীও নাই।তাহলে কিভাবে পাবনায় বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন করবে।

তবে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান এর দাবী, পাবনা জেলা ‘বিএনপিতে কোনো ভাগ নেই। নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে ছিলেন, একসঙ্গেই আছেন। মূলত করোনার কারণে আমরা আগের মেয়াদে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারিনি। নতুন করে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা আবার সে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই কমিটি গঠন শেষ হবে।’

সেপ্টেম্বর ২১,২০২২ at ২০:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /মন /শই