মশার প্রজনন অজুহাতে প্রচলিত আইন ভেঙে যশোর পৌর এলাকায় পুকুর ভরাটের অভিযোগ

যশোর শহরে ষষ্টিতলা কাঁচাবাজারের পাশে মশার প্রজনন হচ্ছে এমন অজুহাতে প্রচলিত আইন ভেঙে পুরোনো একটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্রথমে কয়েক দিন রাতের আঁধারে, পরে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় ওই পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। এদিকে, পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, দিনকে দিন শহরের ছোট বড় জলাশয়-পুকুরগুলো ভরাটের কারণে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

ষষ্টিতলার পুকুরটি ভরাট হলে ঔ এলাকায় শত শত মানুষ জলাবন্ধতার মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। শহরবাসী ও জীববৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে জলাধার বা পুকুরটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যশোরের নেতৃবৃন্দ।

সোমবার সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, যশোর শহরে ষষ্টিতলা কাঁচাবাজারের পাশে ৩৩ শতকের একটি বিশাল পুকুর। পুকুরের চারিপাশেই মানুষের বসবাস। পুকুরটির মালিক লিয়াকত আলীর পুকুরের তিন ভাগের দুইভাগ বালি দিয়ে ভরাট সম্পূর্ন করছে।

আরো পড়ুন :
শিবগঞ্জের কিচকে নাগরিক ঐক্যর ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত

স্থানীয়রা জানান, পুরানো পুকুরটি ভরাট করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিদের ইন্ধনে। পুকুর ও জলাশয় ভরাট আইন লঙ্ঘন করে ভরাট করা হচ্ছে একটি পুরানো পুকুরটি। ইতোমধ্যে ওই পুকুরটির প্রায় ৭০ শতাংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই পুকুরটিতে মাছ চাষসহ স্থানীয় এলাকাবাসির ব্যবকার্য হয়ে আসছিলো।

সম্প্রতি জমির মালিক লিয়াকত আলী ও মহসিন আলী স্থানীয় প্রভাবশালী মেসবাহ উদ্দিন ও কামরুজ্জামান মামুনের লোকজন পরিবেশ আইন না মেনে প্রতিদিন ভ্যানে করে মাটি ফেলছেন ওই পুকুরে। তবে জমিটির মালিক মহাসিন ও তার ভাই লেয়াকতের দাবি, আমরা দুই ভাই এই ৩৩ শতক জমির মালিক। বছর ত্রিশেক আগে এখানে পুকুর ছিলো। আস্তে আস্তে মাটি ভরাট হতে হতে ডোবায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমা হলেই বোঝা যায় এটা ডোবা। এর চারপাশে বসতবাড়ি। এখানে মশার প্রজনন ক্ষেত্র বা মশার উৎপত্তি স্থল। তাই প্রতিবেশীদের কথা রাখতে ডোবা ভরাট করার সিদ্ধান্ত নিই।

বর্তমানে ভরাট করার দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিবেশী সঞ্জয় জোয়ারদার। তবে পুকুর ভরাটে পৌরসভা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি আছে কিনা পুকুরের মালিক লিয়াকত আলী দেখাতে পারেননি। পুকুরটি ভরাট হলে ষষ্টিতলার এলাকায় শত শত মানুষ জলাবন্ধতার মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, দিনকে দিন শহরের ছোট বড় জলাশয়-পুকুরগুলো ভরাটের কারণে বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা জলাবন্ধতার কবলে পড়তে চাই না। দ্রুত প্রশাসন পুকুরটি রক্ষায় ভূমিকা রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন।

শহরে দিনকে দিন কারণে অকারণে পুকুর বা জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে উদ্ধেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যশোরের আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুর হক মনি বলেন, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে।

পুকুর ভরাট হলে ঔ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির সাথে জীববৈচিত্রও নষ্ট হবে। তা ছাড়া শহরে এমনিতেই আমাদের জলাধার কমে যাচ্ছে। পরিবেশের প্রয়োজনে আমাদের জলাধার রক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের স্বার্থে, শহরবাসীর স্বার্থে, জীববৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে জলাধার বা পুকুর রক্ষা করা প্রয়োজন। আশাকরি পৌর কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তর পুকুরটি রক্ষায় ভ’মিকা রাখবে। দলবলের উর্দ্ধে পরিবেশ বাঁচাতে সংস্থাদুটিকে দ্রুত ভ’মিকা নিতে অনুরোধ করেন দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আন্দোলন করা এই নেতা।

এই বিষয়ে যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুয়ায়ী পুকুর, খাল ও বিলসহ কোনো ধরনের জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা ছাড়া জলাধার বা পুকুর, খাল-বিল এসব ভরাট না করতে উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। যশোর শহরের ষষ্টিতলার পুকুরটি ভরাটের জন্য আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। আমরা বিষয়টি দেখবো।

এই বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, পৌরসভার ভিতরে কোন পুকুর বা জলাশয় ভরাট করতে হলে পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া লাগে। পুকুর বা জলাশয় ভরাটের বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিষেধাক্ষাও রয়েছে। যশোর শহরে এখন বৃষ্টি হলেই জলাবন্ধতা সৃষ্টি হওয়ার একমাত্র কারণ শহরের জলাশয়গুলো ভরাট হওয়ার।

এদিকে, যশোর শহরের ষষ্টি তলা এলাকায় পুকুর ভরাট হচ্ছে এরকম খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যান ৬ নম্বর পৌর কাউন্সিলর আলমঙ্গীর কবির সুমন। এসময় তিনি পুকুর ভরাট কাজে সংশ্লিষ্টদের এরকম কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি উপস্থিত লোকজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী পুকুর ভরাটের মত কাজ করা আইনত দণ্ডনীয়। এই কাজে সংশ্লিষ্টরা যতো প্রভাবশালী হোক না কেন, তা করতে দেওয়া হবে না।

সেপ্টেম্বর ১৯,২০২২ at ২০:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /রপ /শই