ঘোড়াঘাটে অলিতে গলিতে মাদক সেবনের মূল ভূমিকায় শিক্ষার্থী

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মাদক মুক্ত ঘোষণা করলেও রাজনৈতিক শেল্টার ও এক শ্রেণীর সরকারি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ফেন্সিডিলের পাশাপাশি দিনাজপুরের, ঘোড়াঘাটে, বানের পানির মত ধেয়ে আসছে অনাগ্রা, ইয়াবা ট্যাবলেট দেশী বিদেশী বিভিন্ন মাদক।

ইয়াবা এবং অনাগ্রা রাজধানী সহ বিভিন্ন স্থানে অধিক পরিচিত হলেও দিনাজপুরের নেশার জগতে এটি এখন হট কেক এবং নতুন আইটেম। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে হিলি স্থল বন্দর হয়ে এখন দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চলসহ ঘোড়াঘাট উপজেলার অলিতে গলিতে মাদকের ছড়াছড়ি।

প্রায় প্রতিমাস ৩০-৪০ হাজার ট্যাবলেট নেশাখোরদের নেশার খোরাক জোগাচ্ছে মাদক কারবারিরা। সিন্ডিকেট পৃষ্ঠপোষক আমদানিকারকরা মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় সদস্যরা এ সেক্টর থেকে প্রতিমাসে আদায় করছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

প্রভাবশালী এবং কথিত রাজনীতিবিদদের ড্রইং রুমেও ওই ভাগের টাকা পৌঁছে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে মাদক সম্রাটদের তালিকা রয়েছে। তারা বীরদর্পে এ ব্যবসা চালিয়ে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক সেজে গেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থাই নিতে পারছেন না মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইন প্রয়োগ কারী সংস্থার কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন সভা সমাবেশ মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখলেও মূলত তা কোন কাজে আসছে না। যদিও দিনাজপুর পুলিশ ও স্থানীয় থানার পুলিশ ভাম্যমাণ আদালত প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে মাদক দ্রব্য ও মাদক সেবীদের আটক ও নেশা দ্রব্য উদ্ধার করছে। এতেও সফলতা দেখাতে পারেন নি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইন প্রয়োগ কারী সংস্থার পুলিশ বাহিনী। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য র‌্যাব, বিজিপি দফায় দফায় বড় ধরনের চালান আটক করলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা। কিন্তু কেন এ প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছে না দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার মানুষ। যুব সমাজও বেশী আশক্ত হয়ে পড়েছে এর প্রতি। দীর্ঘদিন ধরে এলকায় মাদকসেবীরা নেশা হিসাবে হিরোইন, গাজা, মদ, তাড়ি, ডিটি জেসিক ইনজেকশন ও ডিএস স্পিরিট সেবন করে আসছে। ১৫-৩০ বছর বয়সী মাদকসেবীরা আইপীল, সিডাক্সিন, ইনোকটিন, ব্যথানাশক জামবাক, ইদুরমারা ওষুধ, গরুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোপেজেসিক মাদ্রাজি ইনজেকশন ও টিকটিকির লেজ পুড়িয়ে নেশা করে থাকে। কিশোর শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনের মূল ভূমিকায় রয়েছে।

মাদকসেবীরা বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে যেমন- হিরোইন, কোকেন, আফিম, ক্যানাবিস গাজা, হাশিশ, ফেনসিডিল, বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন, ইয়াবা ট্যাবলেট, দেশী-বিদেশী মদ সেবন করে।

শুধু এসবই নয় জুতায় লাগানোর আঠা বা ডান্ডি আঠা, চড়শ, কোডিন, মরফিন, বুপ্রেনর ফিন, প্যাথেডিন, মারিজুয়া এরোসোল্স, লাইটার ফ্লুইড, বার্ণিল রিমোভার, নেইল পালিশ রিমোভার, পেইন্ট থিনার, স্পট রিমোভার, ক্লিনিং সল্যুশনস্, গুল এমফিটামিন, ক্যাটামিন, পাইপারজিনস, মেফিড্রিন, স্পাইস, এক্সটাসির মতো নতুন নতুন মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ছে যুবসমাজ।

পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ঔষধ যেমন- এফ ফেটামিনস, বারবিচ্যুরেটস, সিডেটিড, হিপনোটিকস, ভ্যালিয়াম, ফ্রিশিয়াম, ইউনাকটিন, মেথাকোয়ালোন, জায়া জিপাম, নাইট্রাজিপাম ও ক্লোর ডায়াজিপোক্সাইড ইত্যাদি জাতীয় ঘুমের ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। যেগুলোর অধিক সেবনে মৃত্যু ঘটতে পারে। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার উপজেলাজুড়ে।

তারা জুতা তৈরীর সলিউশন দিয়ে তৈরী ডান্ডি নেশার বস্ত ও ফার্মেসী থেকে বিভিন্ন প্রকার ঘুমের ঔষুধ, ভিটামিন সিরাপ, সিনামিন দিয়ে তৈরী করে এক প্রকার ঝাকি নামক নেশা তৈরী করে সেবন করছে।

এখন হাইস্কুল থেকে শুরু করে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেশায় টইটুম্বুর। অনেকে অভিভাবক তাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েদের নেশা গ্রস্থ হওয়ার কথা জানেন না। নেশার তালিকায় মূল ভূমিকায় রয়েছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা, পুলিশের সদস্য, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজিবী সহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবির নামও রয়েছে।

এমনকি এ তালিকায় রয়েছে স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা নারী। মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের ইয়াবা এখন হটকেক। অনেকে কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে এটি সেবন করছে।

এ সব নেশা জাতীয় মাদক দ্রব্য অনাগ্রা ও ইয়াবা প্রথমে মায়ানমার থেকে রাজধানী ঢাকায় আনা হয়। পরবর্তীতে এসব নেশা জাতীয় মাদক, মাদক সম্রাটরা উত্তরাঞ্চলের জেলা উপজেলায় পৌছে দেয়। মাদক বারবারিরা ঘোড়াঘাট উপজেলার ত্রিমোহনী ঘাট, আজাদমোড়, চারমাথা মোড়, কামদিয়া মোড়, কালিতলা, এসকে বাজার, শহীদমিনার, থানামোড়, খেতাবমোড়, লালবাগ, ঘোড়াঘাট ফরেস্ট এলাকা, ওসমানপুর মিশন, কুচেরপাড়া, কামারপাড়া, কশিগাড়ী, দক্ষিণ দেবীপুর জোব্বার চেয়ারম্যানের পাড়া, সাউদাগাড়ী, বিন্নাগাড়ী মোড়, গোস্ত হাটি মোড়,রাণীগঞ্জ পাচঁ মাথা, বিন্যাগাড়ী, শৌলিয়া, কানাগাড়ী, বলগাড়ী, রানীগঞ্জ সিনেমা হল, রানীগঞ্জ আ’লীগ অফিস সংলগ্ন এলাকায়, চাউলিয়া পট্টি, গোশত হাটি মোড়,গোডাউন এলাকা, নুরপুর হাফিজারের চাতালের পিছনে বাগানে, নতুন সোনালী ব্যাংকের পিছনে, নুরপুর, সিংড়া হাফিজুরের বাড়ী, কলাবাড়ি মাদরার পিছনে হুরির বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা বীরদর্পে রাজনৈতিক শেল্টার ও এক শ্রেণীর প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। মাদক বিক্রেতারা এখন কৌশল পাল্টিয়েছে। তারা গ্রাম-গঞ্জে,পাড়া মহল্লায়, অলিতে গলিতে ফেরি করে মাদক বিক্রি করছে। দেখার কেউ নেই।

সেপ্টেম্বর ১৭,২০২২ at ১৭:১৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /দেপ /শই