আসুন সফল হওয়ার কলাকৌশল সম্পর্কে জেনে নেই

ফিক্সড থেকে গ্রোথ মাইন্ডে গিয়ে আপনি আপনার সফলতাকে দারুণভাবে তরান্বিত করতে পারেন সফলভাবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আপনি সৃষ্টির সেরা এবং আপনি সৃষ্টিকর্তার একজন প্রতিনিধি এই পৃথিবীতে। আপনাকে নিয়ে স্রষ্টার অবশ্যই একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তাই আপনার জন্মগ্রহণটাই একটি সফলতা। এখন শুধু উপলব্ধি ও নির্ণয় করতে হবে আপনি এই মুহূর্তে সফলতার কোন স্তরে বা কোন স্টেজে আছেন।

চলুন এবার শুরু থেকেই শুরু করি। তবে পরবর্তী লেখাটুকু পড়ার আগে খাতা-কলম নিয়ে নিরিবিলি বসুন। লেখার প্রতিটি পয়েন্ট অতিক্রম করার পূর্বে বাক্যের প্রতিটি আহ্বানে মনের গভীর থেকে সাড়া দিন এবং রিকয়ারমেন্টগুলো ঠিকঠাক পূরণ করুন।

আপনি কি বিশ্বাস করতে পেরেছেন আপনি জন্মগতভাবেই সফল?
উত্তর : (লিখুন)।

সফলতার এই মহাযাত্রায় নিজেকে শেষ পর্যন্ত কোথায় দেখলে তৃপ্ত হবেন?
উত্তর : (লিখুন)।

আপনার পরিবার ও প্রিয়জনকেও সেই দৃশ্য তৃপ্তি দেবে কি?
উত্তর : (লিখুন)।

আপনি এই কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনের ব্যাপারে বিশ্বাস করেন?
উত্তর : (লিখুন)।

সফল হবেন এ ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন?
উত্তর : (লিখুন)।

এবারে উত্তর লেখার সময় মনে রাখবেন পৃথিবীর সকল বাস্তবতা কারো না কারোর দৃঢ় বিমূর্ত বিশ্বাসের মূর্ত রুপ। মাথায় রাখুন If anybody can do, I can do also.

এবার অকপটে স্বীকার করুন, বিশ্বাসীদের পরীক্ষা দিতে হয় এই ধর্মমত সম্পর্কে জানেন কি?
– জানি (প্রত্যাশিত সম্ভব্য উত্তর)।

নিজের বেলায় মানেন?
– মানি। (প্রত্যাশিত সম্ভব্য উত্তর)।

Now Let’s read out the problems as like the Exam paper.

আপনি যেহেতু জানেন এবং বিশ্বাস করেন আপনি জন্মগতভাবেই সফল, তাই এই মহাযাত্রায় (সফলতার যাত্রায়) এই মুহূর্তে কোন পর্যায়ে/ স্তরে আছেন প্রথমেই নিজের মহাজাগতিক স্থান নির্ণয় করুন।

১.আপনি সফলতার রাস্তা এখনো বুঝে উঠেননি তবে, বেশ মোটিভেটেড বা অনুপ্রাণিত। (আপনি এখনো প্রারম্ভিক বা প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করছেন)।

২. ধীরে ধীরে বাড়তি উত্তেজনা অনুভব করছেন। (আপনি আপনার কাজ ও পরিবেশ থেকে শিখতে পারছেন অর্থাৎ এটি আপনার প্রশিক্ষণরত ও শিক্ষানবিশ মনের পরিচয় দিচ্ছে)।

৩. কাজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় থাকছেন। (ইন্সপায়ার্ড লেভেল এ পৌঁছে গেছেন)।

৪. কর্মপরিধির ব্যাপ্তি ঘটছে। (স্বপ্নের বিনির্মানে মনোযোগ স্থাপিত হয়ে গেছে আপনার)।

৫. বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।
স্বপ্ন বা কল্পনা যেহেতু প্রকাশিত বা দৃশ্যমান হবার পূর্বে কারোর কর্ণ কিংবা দৃষ্টিগোচর হয়না তাই বাধাও আসেনা। যদি দেখেন আপনার উদ্যোগটি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তাহলে বুঝবেন আপনার বিমূর্ত কল্পনা মূর্তরুপ ধারণ করতে শুরু করেছে অর্থাৎ কল্পনা বাস্তবে অঙ্কুর হয়েছে। Its a positive symbol.

৬. এবার খেয়াল করুন এ পর্যায়ে গভীরভাবে।
আপনি কি পথ থেকে পলায়ন করছেন অথবা খানিকটা বিচ্যুত বা বিচলিত, নাকি বাধা অতিক্রমে বদ্ধপরিকর ও করতে সচেষ্ট আছেন। (যদি প্রচেষ্টারত থাকেন তবে এটি আন্ডারস্টুড লেভেল। অর্থাৎ আপনি আপনার সফলতার পথে যতটুকু এসেছেন বুঝেই এসেছেন এবং আপনি আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে আন্ডারস্টুড। আর যদি নিজেকে বিচ্যুত মনে হয় তবে আপনাকে পুনরায় ২ নম্বর নিরীক্ষণে ফিরে যেতে হবে দক্ষ মেন্টরের পরামর্শ নিতে)।

৭. প্রচেষ্টার বাঁকে বাঁকে চারপাশ শূন্য দেখালেও কল্পনায় সকল স্বপ্ন জীবন্ত রয়েছে কি? (এটি আপনার ম্যাচিউর্ড লেভেল)।

৮. ওপরের সবকিছুকে একেকটি অর্জন বলে মনে হচ্ছে এবং ভয়হীন তৃপ্তি বোধ করছেন। (এডভান্সড লেভেল)।

৯. শত বাধার দেয়াল সত্ত্বেও দেয়ালের অজানা সর্ষে সম ফুটো দিয়ে পানি গড়িয়ে তৃষ্ণার্থের কাছে আসার মতো দৃশ্য চোখে পড়ছে। (প্রকৃতি এবার আপনার প্রতি তার ঋণ পরিশোধ করতে উদ্যোগ নিয়েছে। আপনি স্রষ্টার রহমত প্রাপ্ত হয়েছেন)।

১০. মনের মধ্যে এবার ঐশ্বরিক শক্তি অনুভূত হচ্ছে। (অর্জনের সময় হয়েছে, লক্ষ্য ঠিক রেখে চেষ্টা বাড়িয়ে দিন। সবকিছুর জন্য শুকরিয়া আদায় করুন)।

বি. দ্র. অধিকাংশ লোকেরাই মাঝপথে অর্থাৎ ৫ নম্বরে এসে থেমে যায়। আপনিও যদি পর্যালোচনার সে পর্যায়েই অর্থাৎ ৫ নম্বর স্তরে আটকে থাকেন তবে, আরেকটি অংক আপনার জন্য। চলুন বুঝতে চেষ্টা করি এবং নিচের প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করি।

১. আপনি কী কী সমস্যায় আটকে আছেন খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।

২. সমস্যা থেকে কামব্যাক করতে চান কিনা শক্ত সিদ্ধান্ত নিন। (এখানে সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে গেলে সকল পথ বন্ধ আপনার। তাই আটকে গেলে আপনার উদ্যোগের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে নিজের সাথে নিজে কাউন্সিলিং করুন অথবা মেন্টরের পরামর্শ নিন, আপনার আটকে থাকা ঠিক হবে নাকি উৎরে যাওয়ায় উত্তম হবে)।

৩. উৎরে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এবার সমস্যার জন্য সম্ভব্য কী কী উপকরণ ও প্রক্রিয়াগত ভুল ঘাটতি ছিল মূল্যায়ন করুন এবং খাতায় লিখুন। (লেখার পূর্বে নিজেকে দয়ালু ও ক্ষমাশীল করুন স্রষ্টার একান্ত দয়া ও ক্ষমা লাভের আশায়)।

৪. সমস্যাগুলোর কোনটি পরিস্থিতি নির্ভর আর কোনগুলো ব্যক্তি থেকে উৎসারিত তা পৃথক করুন।

৫. এসব সমস্যার মধ্যে কোন কোনটি আপনি প্রাণপনে চাইলে নিজেই সমাধান করতে পারবেন এবং তা সম্ভব্য কী কী উপায়ে, লিখে ফেলুন। একাধিক উপায় ভাবনায় এলে তাও লিখুন।

৬. সমস্যার সমাধানে আপনার সম্ভব্য পরামর্শ সহযোগী নির্বাচন করুন এবং তাকে বিশ্বাস করুন।

৭. এবার মোট সমস্যার কত শতাংশের সমাধানকারী আপনি নিজেই হতে পারবেন মনে হচ্ছে খাতায় লিখুন।

৮. এবার থামুন। একটু ভাবুন। গভীরভাবে ভাবুন।
দেখুনতো অধিকাংশ সমস্যাই মিটে যাওয়ার মতো বলে মনে হচ্ছে কিনা।

৯. এবার মনে করুন মহাযুদ্ধে পৃথিবীতে বেঁচে যাওয়া মানুষ বলতে আপনিই একমাত্র অথবা আপনিই যদি পৃথিবীর প্রথম মানুষটি হতেন তবে আল্লাহ ছাড়া কে বা আপনার সাহায্যেকারী থাকতো? তাহলে অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে যে স্রষ্টা আপনাকে এতটা সইবার ক্ষমতা দিয়েছেন ইতোমধ্যে সেই স্রষ্টার নিকট বাকি সমস্যাটুকুর সমাধানের জন্য বাড়তি শক্তি প্রার্থনা করুন। ধৈর্য্য ধরুন।

১০. সর্বশেষ নির্ণয় করুন এবং উপলব্ধি করুন, জমে থাকা অবশিষ্ট দুঃখকষ্ট বা সমস্যাগুলো যতটুকু রয়েই গেল শেষপর্যন্ত সেসব সমস্যাসমূহ আপনার স্বপ্নগুলোর চেয়েও কি খুব বড়?।

যদি সম্ভবনা ও সমস্যা সমানই না হয় তবে ‘সমান ও বিপরীত ক্রিয়ার’ বিজ্ঞান কি মিথ্যা হয়ে যেত না?।

আপনি কি ইতিহাসের ওই সকল সফল মানুষদের চেয়ে আলাদা কোনো মাখলুখ যে তাদের মতো দুঃখ জরা না ডিঙিয়েই আপনার জীবনের গল্পটি তাঁদের জীবনের মতো অন্যের জন্য প্রেরণা বানিয়ে ফেলবেন?।

যদি উত্তর লিখতে গিয়ে আপনার হৃদয় আন্দোলিত হয়, তবে লক্ষ্য অবিচল থাকুন। কারোর কথা শুনবেন না দয়া করে। ওই আন্দোলিত হৃদয়ের কথা শুনুন। আপনার হৃদয় যেথায় আশ্রয় পেতে চায় সেথায় আপনার স্বর্গ সুখ। মনে রাখতে হবে আমাদের জীবনের সকল দুঃখ-কষ্টই মৌলিকভাবে দুই রকম।
১. অদক্ষতাজনিত কর্মফল। ২. সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষা। প্রথটির জন্য চাই আত্ম বিনির্মাণ ও দক্ষতার উন্নয়ন, অপরটির জন্য ধৈর্য্য।

লেখক : মো. আক্তারুজ্জামান জীবন
কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষক, এক্সিলেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার। বহুস্তর বিক্রয় ও বিপণন উদ্যোক্তা, এক্সিলেন্ট গ্রুপ।

সেপ্টেম্বর ১৫,২০২২ at ২১:৪৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /এসআর /শই