চৌগাছার মুক্তিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২২ লাখ টাকা নিয়োগ বানিজ্য, স্থগিতের পরেও পুনরায় নিয়োগের সিদ্ধান্ত

জেলার চৌগাছার ঐতিহ্যবাহি মুক্তিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩টি শুন্য পদে লোক নিয়োগে প্রায় ২২ লাখ টাকার অর্থ বানিজ্য করার পর নিয়োগ স্থগিত করা হলেও পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর এই নিয়োগ চুড়ান্ত করা হবে বলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে।

নিয়োগ সংক্রান্ত বিগত ম্যানেজিং কমিটির সভায় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক প্রকাশ্যে বলেন, এমপি সাহেবকেই ৫ লাখ দিতে হবে। এ ঘটনায় সভায় উপস্থিত অন্যান্য সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রকাশ্যে অর্থবানিজ্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা দাবীর বিষয়ে জানতে পেরে এই নিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষনা করা হয়।

ওই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) ডাঃ নাসির উদ্দিন বলেন, নিয়োগ বানিজ্যে তার তার নাম ব্যবহার করে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ওই সভাপতি। যাকে আমি আদৌ চিনিনা। বিষয়টি জানার পরপরই নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছি। এদিকে অর্থবানিজ্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মানুষ।

আরো পড়ুন :
পাইকগাছায় পুশ বিরোধী অভিযানে ৬ চিংড়ি ব্যবসায়ীকে জরিমানা

জানাগেছে, উপজেলার মৃক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুক্তিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহায়ক, একজন আয়া ও একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অফিস সহায়ক পদে ৭ জন, আয়া পদে ১০ জন ও পরিচ্ছন্নকর্মী পদে ৭ জন মোট ২৪ জন চাকরি প্রত্যাশিরা আবেদন করেন।

নিয়োগের বিষয়টি চুড়ান্ত করার লক্ষে গত ২২ জুলাই সকালে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হাসিনুর রহমান ম্যানেজিং কমিটির সভার আহবান করেন। সভায় প্রধান শিক্ষক শাহাজান আলীসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সকলের সামনে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হাসিনুর রহমান বলেন, চাকরী প্রত্যাশিদের নিকট থেকে আমি যাই নিই না কেন, সেখান থেকে এমপি সাহেবকে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এছাড়া আরো খরচখরচা আছে।

সভাপতির এই বক্তব্যে সুর মেলান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজান আলী। সভাপতির এই বক্তব্যে তাৎক্ষনিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ। তারা জানান, এমপি মহোদয় কেন টাকা নেবে? স্কুলটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহাসিক স্থান। প্রয়োজনে আমরা সকলে মিলে এমপি মহোদয়ের কাছে যাব। আমাদের কথা তিনি নিশ্চয় শুনবেন। তিনি টাকার কথা বলতে পারেন না। একপর্যায় সভায় ৩টি পদে প্রকাশ্যে টাকা নির্ধারণের পর ৩ প্রার্থীর অভিভাবকের নিকট ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা গ্রহন করেন।

তিনি বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদের জন্য চাকরি প্রত্যাশির নিকট থেকে ৯ লাখ ৭৫ হাজার, আয়া পদের প্রার্থীর নিকট থেকে ৭ লাখ যুক্তি হলেও ৬ লাখ ৮৫ হাজার এবং পচ্ছিন্নকর্মী প্রার্থীর নিকট থেকে ৫ লাখ মোট ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদে গ্রহন করে। এই টাকা নেয়ার সময় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও সভাপতির নির্দেশে টাকা গণনা করেন। টাকা গণনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এক সদস্য।

সভায় উপস্থিত থাকা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, আব্দার রহমান ও মহিলা সদস্যের অনুপস্থিতিতে সভায় অংশ নেয়া তার স্বামী সাইফুল ইসলাম স্বীকার করেন, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দুজনা এমপি ৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলে বারবার তাদেরকে জানানো হয়েছে। বাকি টাকা স্কুলের উন্ননে লাগানো হবে।
সীমাহীন নিয়োগ বানিজ্য ও এমপির নাম ব্যবহার করে টাকা নেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) ডাঃ নাসির উদ্দিনের হস্তক্ষেপে অর্থবানিজ্যের এই নিয়োগ স্থগিত ঘোষনা করা হয়। কিন্তু অর্থবানিজ্যের বিষয়টি সঠিক তদন্ত না হয়ে পুনরায় ১ মাস ২৫ দিন পর এই নিয়োগ চুড়ান্ত করা হচ্ছে। আগামী ১৭ সেপ্টম্বর এই নিয়োগ চুড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান, নিয়োগের বিষয়ে অর্থবানিজ্যের বিষয়টি শুনেছি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে ডেকেছিলাম অর্থবানিজ্যের বিষয় তারা স্বীকার করেনি। তিনি বলেন মাননীয় এমপি স্যারের নির্দেশে নিয়োগটি চুড়ান্ত করা হবে। ৩টি নিয়োগে যাদেও বিষয়ে অর্থবানিজ্যের অভিযোগ সেগুলো কি চুড়ান্ত করা হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে আমার কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

সেপ্টেম্বর ১৪,২০২২ at ২০:৫৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /দেপ /শই