চৌগাছা ছারা পাইলটের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ফের সাময়িক বরখাস্ত

যশোরের চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফাকে ১০টি সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগে ছয়মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি।

একই সাথে তিনি যেন ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন সে বিষয়ে লিখিতভাবে উপজেলা পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

পত্র প্রাপ্তির বিষয় নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বের বিষয়টি নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুর রহমান বাবুল স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তপত্র ১২ সেপ্টেম্বর যশোরের জেলা প্রশাসক, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, যশোরের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন :
ভোলার দৌলতখানে মসজিদের ঈমামের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

একইসাথে সাময়িক বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষককে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষায় ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব না দেয়ার জন্য ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক একটি লিখিত পত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করানো হয়েছে।

বহিস্কারাদেশ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘আপনাকে গত ১৩ এপ্রিল তারিখে বহিস্কার আদেশের পর ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আপনার নিজের দোষ স্বীকার করা, ক্ষমা প্রার্থনা, অনুতপ্ত হওয়া ও ভবিষ্যতে বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত না হওয়ার অঙ্গিকারের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুন তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮নং সভায় তদন্ত কমিটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে শর্তে সাময়িকভাবে আপনার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

ইতিমধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বের আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সেখানে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আপনি নিম্নক্তো কার্যক্রমগুলি করেছেন যা প্রতীয়মান হয়। প্রাক্তন সভাপতির ২টি ও বর্তমান সভাপতির ৩টি স্বাক্ষর জাল করেছেন, প্রমাণিত। ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সকল সদস্যের অসংখ্য স্বাক্ষর জাল করেছেন, প্রমাণিত।

বিধি বহির্ভূতভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনের প্রক্রিয়া করেছেন। জেলা পরিষদের অনুদানের ৩ লক্ষ টাকা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে উত্তোলন ও উত্তোলিত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। টিউশন ফিসের ৯৫ হাজার টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করেননি। প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা, স্টীলের বেঞ্চ বিক্রির টাকা এবং অ্যাসাইনমেন্টের খাতা বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করেন না।

বেতন রেজিষ্টার বহি নেই। উন্নয়ন মূলক কাজে নিজে সভাপতি সেজে নিজের স্বাক্ষরে প্রকল্প কমিটি করেছেন। শিক্ষার্থীদের বেতন বহি বা রশিদ ব্যবহার করেন না। সর্বোপরি আবারও বিধি বহির্ভূতভাব বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি ছাড়া নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, মাইকিং, পেপারিং ইত্যাদি কার্যক্রম করেছেন, রেজুলেশন বহিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কমিটির কোন সদস্যের উপস্থিতি ছাড়াই তিনটি রেজুলেশন নিজ হাতে লিখে রেখেছেন সেখানে ৩৮ জন অভিভাবকের ভোটার পরিবর্তন করেছেন এবং আপনার স্বাক্ষর আছে।

এছাড়া ৩১ আগস্ট সভাপতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ও ৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এমতাবস্থায় এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমের জন্য বিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ সেপ্টেম্বর তারিখের ৯নম্বর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে পুনরায় সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হলো।

কেন আপনাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো এবং বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক প্রভাত কুমার মিশ্রকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।’’

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম সাইফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে ১৩ এপ্রিল প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করা হয় এবং ১০ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহিদুর রহমান বকুলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি গত ৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেছেন।

তার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। একইসাথে তাকে যেন কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া না হয় সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করানো হয়েছে। তবে এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক কাজী গোলাম মোস্তফার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সরাসরি তার কাছে বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামান বলেন, পত্রটি ১২ তারিখে অফিসের শেষ সময়ে পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বের বিষয়টি নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, বহিস্কৃত/সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। ম্যানেজিং কমিটি বহিস্কার সংক্রান্ত বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করলে তিনি অন্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তাব করবেন। এরপর শিক্ষাবোর্ড তাকে অনুমোদন দেবেন। তিনি বলেন বিষয়টি আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

সেপ্টেম্বর ১৩,২০২২ at ১৯:৩৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /মদ /শই