কালীগঞ্জে টিসিবির ডিলার পেতে একাধিক ভূয়া প্রতিষ্ঠানের আবেদন

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একদমই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া ভ‚য়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে টিসিবির ডিলার পেতে আবেদন করা হয়েছে। অন্যের প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে, মুদি ব্যবসায়ী না হওয়াসহ ট্রেডিং কর্পোরেশনের কোন শর্তই মানেননি তারা।

টিসিবির ডিলার পেলে দোকান ভাড়া নেবেন এমন ব্যক্তিও ডিলার পেতে আবেদন করেছেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, গত ২৩ জুন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের উপ-সচিব মো: শেখাবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে টিসিবির ডিলারশীপের জন্য দাখিলকৃত আবেদনের বিষয়ে তদন্তপূর্বক মতামত চেয়ে সংশ্লিষ্ঠদের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার টিসিবির ডিলার পেতে মোট ৩১টি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো- বিগ স্টোর, ছায়েরা এন্টার প্রাইজ, মেসার্স নুর আলী ট্রেডার্স, মাজেদা স্টোর, জোয়ারদার ট্রেডার্স, মাহাফুজা এন্টার প্রাইজ, মো: আব্দুল হাকিম, মেসার্স সবুজ ট্রেডার্স ও মিহিন ভ্যারাইটিজ স্টোর।

চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ী ও মুদি ব্যবসায়ী হিসেবে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স ও ৩ থেকে ৪ মেট্রিকটন পণ্য ধারণের উপযোগী গোডাউন থাকতে হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকার নাছরিন বেগমের মাহফুজা এন্টার প্রাইজ ও এমইউ কলেজ এলাকার মাজেদা বেগমের মাজেদা স্টোর নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ত¡ পাওয়া যায়নি।

তারা অন্যের প্রতিষ্ঠান নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এরআগে এই দুই ব্যক্তি কোন প্রকার ব্যবসার সাথেও সংশ্লিষ্ট ছিল না। এরমধ্যে নাছরিন বেগম সম্প্রতি টিসিবির পণ্য অবৈধ ভাবে খোলাবাজারে বিক্রির অপরাধে ডিলার বাতিল হওয়া শিপন মৃধার স্ত্রী। এবার তিনি স্ত্রীর নামে ও তার চাচাত ভাই মোঃ ওবায়েদুল হক ছায়েরা এন্টারপ্রাইজের নামে ডিলার নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

মাহতাব উদ্দিন কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোজ কুমার জানান, টিসিবির ডিলার পেলে মাজেদা বেগমের স্বামী এমইউ কলেজের ল্যাব সহকারী শামছুল ইসলাম একটি দোকান ভাড়া নিবেন বলে জানিয়েছেন। ভাড়া দিবেন ৫ হাজার টাকা। এখনো তারা দোকান নেয়নি।

মাজেদা স্টোরের মালিক মাজেদা বেগম মুঠোফোনে জানান, মাহাতাব উদ্দিন কলেজের পিছনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এরপর তিনি তার স্বামীকে ফোনটি দিয়ে দেন। এরপর তার স্বামী দাবি করেন, মনোজ স্যারের বাসার নিচে তিনি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছেন। প্রায় ১ বছর যাবৎ ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

মাজেদা স্টোরের তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আবু হাসনাত শাহিয়ার বলেন, সরেজমিনে গিয়ে মাজেদা স্টোর নামে তিনি কোন দোকান পাননি।

মাহাফুজা এন্টার প্রাইজের তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় অফিসার মো: আসাদুজ্জামান বলেন, তদন্তে যা পেয়েছেন সেটিই রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন। তিনি তদন্ত রিপোর্ট জমাও দিয়েছেন। সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি বলা যাচ্ছে না।

এদিকে বারবাজার এলাকায় ওবায়দুল হকের ছায়েরা এন্টার প্রাইজ নামে টিসিবির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মৃধা রাইস এন্ড ওয়েল মিলস নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুদি দোকান গড়ে তুলেছেন। উপজেলার গাজীর বাজার এলাকার সার ব্যবসায়ী টুটুল মিয়া মেসার্স নুর আলী ট্রেডার্স নামে টিসিবির ডিলারের জন্য আবেদন করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে তার কোন মুদিখানার দোকান নেই। এছাড়াও বারবাজার এলাকার আতিকুর রহমানের মেসার্স সবুজ ট্রেডার্স মূলত সার ও কীটনাশকের দোকান। টিসিবির ডিলার পেতে তিনিও আবেদন করেছেন। উপজেলার দাদপুর এলাকার আব্দুল হাকিমের কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই।

আব্দুল হাকিমের পাশ্ববর্তী চৌগাছা উপজেলার শিশুতলা বাজারে মন্ডল ট্রেডার্স নামে একটি পশু খাদ্যের দোকান রয়েছে। তিনি দাদপুর এলাকায় ভাইপো মহিদুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিজের দাবি করে টিসিবির ডিলারের জন্য আবেদন করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, এখনো সবগুলো তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাইনি। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সেগুলো যাচাই-বাছাই করে জেলায় পাঠানো হবে। যদি কোন তদন্ত রিপোর্টে সমস্যা মনে হয় সেগুলো তিনি নিজে গিয়ে যাচাই-বাছাই করবেন।

সেপ্টেম্বর ১২,২০২২ at ১৮:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /বল /শই