মিয়ানমার ভূখন্ডে গুলাগুলি সীমান্তে আতঙ্কে ফের রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে চলছে সংঘর্ষের গুলাগুলির প্রকট আওয়াজ। ছুঁড়ে আসছে ভারী অস্ত্রে গুলি এপারের ভূখন্ডে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তেঘেঁষা মিয়ানমারের ভূখণ্ডে চলছে প্রচন্ড গোলাগুলি। বেশ কিছু মর্টরশেল, ভারীর অস্ত্রের গুলি ছুঁড়ে এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখন্ডে।

জানাযায়, মিয়ানমারের বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা রাখাইন রাজ্যে সেখানকার বিদ্রোহি গ্রুপ “আরাকান আর্মি” (এএ) এর সাথে প্রায় এক মাসের ধরে মিয়ানমার সেনাদের সাথে তুমুল লড়াই চলছে। মাঝে মধ্যে ওখানকার ছুঁড়া গুলি আর ভারী মর্টরশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখন্ডেও ।

এই অব্যাহতভাবে চলা এ সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে সীমান্ত এলাকায়। এ কারণে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। গত দুই দিনে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা ঘুমধুমের পাশ্ববর্তী কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

আরো পড়ুন :
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে উপকূলের জন্য ‘একটি বাড়ি-একটি শেল্টার হোম’প্রকল্প গ্রহণের দাবি

১২ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে সীমান্তে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে আরও হাজারো রোহিঙ্গা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ীসহ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘুমধুমের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে সংঘর্ষ চলছে, মিয়ানমারের ভূখণ্ডে চালানো ভারী অস্ত্রের গুলি ও ছুঁড়া মর্টরশেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখন্ডে। তবে এদেশে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ওই দেশের সংঘর্ষের ঘটনার অজুহাতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছেন। সীমান্তে খঁড়া নজর না রাখলে ঠিক আগের মতো আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার এশারা বেগম (২৭), সাদেক হোসেন (৪০), মো. তাহের (১৩), মো. শরীফ (৯), বিবি আয়েশা (৭) ও বিবি জান্নাত (৩) পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফের অভিযান শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা শান্ত। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণের কথা জেনে তারা বাংলাদেশে চলে আসছেন। কারণ রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মাত্রা একটু কমলেও রোহিঙ্গাদের কোনো কাজে বের হতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা রোহিঙ্গারা তাই বাংলাদেশে ছুটছেন।

ঘুমধুমের পার্শ্ববর্তী পালংখালী ইউনিয়নের থ্যাংখালী ক্যাম্প-১৯ এর বক্ল-১৬ এর মাঝি আবুল কাসেম (ছদ্মনাম) জানান, কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসছেন। বিষয়টি ক্যাম্প ইনচার্জ বরাবর জানানো হয়েছে। তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমকেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের সামরিকবাহিনীর সাথে ওই দেশের বিদ্রোহি গ্রুপ আরাকান আর্মির সাথে প্রায় মাস ধরে পাল্টাপাল্টি গুলাগুলি শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কিছু গুলি আর ভারী মর্টরশেল ছুঁড়ে এসে আমাদের ভূখন্ডে পড়েছে।

তবে সেই ছুঁড়ে আসা অস্ত্রে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্তের মানুষগুলো নির্ঘুমে দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে। সময়ে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও যুদ্ধ বিমানে সীমান্তের গাঘেঁষে আনাগোনা করতে দেখা যায়।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের বলিবাজার ও সাপ বাজার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ পালিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, বিভিন্ন ফেসবুক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার আওতাধীন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার খবর । তবে অনুপ্রবেশটি কতটুকু সত্য তা খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের পয়েন্ট গুলোতে খঁড়া নজরদারীতে আছে সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা রক্ষি বাহিনী । এখনো সেই রখম রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবরাখবর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি। বিষয়টি দেখছি।

সেপ্টেম্বর ১২,২০২২ at ১৩:৫৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /কম /শই