শিক্ষার ছোঁয়া লেগেছে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার তরুণীদের

বাইসাইকেলের ঘণ্টার টুংটাং শব্দে নীরবতা ভেঙে ছুটে চলছে একদল বিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী। সবার পিঠে স্কুল ব্যাগ। তাদের কেউ বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, কেউবা আবার গৃহ শিক্ষকের কাছে। এ চিত্র চোখে পড়ে সদ্য বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে। এরা দাসিয়ারছড়ার ‘সাইকেল কন্যা’ নামে পরিচিত।
দাসিয়ারছড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নুরজাহান, জেসমিন আক্তার, জান্নাতি খাতুন, নাসিমা খাতুন, মুলকি আক্তার মুন্নি, ষষ্ঠ শ্রেণির লিমা খাতুন, অষ্টম শ্রেণির বিপ্লবি রায় ও জাহিদা খাতুন। এরা সবাই বাইসাইকেলযোগে স্কুলে যাতায়াত করে। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যে নিজেদের ও পরিবারের প্রয়োজনে ফুলবাড়ী উপজেলা সদরসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যেতেও সাইকেল ব্যবহার করে তারা। প্রয়োজনে নিজের সাইকেলে সহপাঠীকে বহনেও পিছপা হয় না।
ছিটমহল বিনিময়ের আগে দাসিয়ারছড়ার মেয়েরা ছিল খাঁচায় বন্দী পাখির মতো। ঘর থেকে বের হতে পারত না। চলাফেরা ছিল সীমিত। লেখাপড়ার স্বপ্ন বেঁচে ছিল শুধু কল্পনাতেই। বয়স ১০ পেরোলেই বিয়ের পীড়িতে বসতে হতো। কিশোর-যুবকেরা ডুবে থাকত নেশায়। এখন সামাজিক কুসংস্কার আর তির্যক চাহনি উপেক্ষা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দাসিয়ারছড়ার মেয়েরা। তাঁরা এখন দল বেঁধে সাইকেলে স্কুলে যাচ্ছে।
দাসিয়ারছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। প্রথমে হেঁটে ও পরে রিকশায় যাতায়াত করতাম। এতে সময়মতো স্কুলে পৌঁছতে পারতাম না। এখন আমার সহপাঠী মরিয়ম, কুলসুম, নবীনা, শাহিনা, মুক্তিসহ ১০ জন সাইকেলে সহজে যাওয়া আসা করি।’
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ছিটমহল বিনিময়ের পর দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ায় বদলে গেছে দাসিয়ারছড়াবাসীর জীবন চিত্র। এখন মেয়েরা নির্দ্বিধায় সাইকেলে স্কুলে যাচ্ছে। উপজেলার আটিয়াবাড়ী গ্রাম থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে দাসিয়ারছড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। বাইসাইকেলে এ পথ পেরিয়ে বিদ্যালয়ে আসে নবম শ্রেণির নাসিমা খাতুন। তার সঙ্গে আসে প্রতিবেশী পঞ্চম শ্রেণির রিনা খাতুন।
অষ্টম শ্রেণির নুরজাহান, লিমা খাতুন, জেসমিন আক্তার, জান্নাতি বেগম, মুলকি আক্তার মুন্নি, বিপ্লবি রায় জানায়, সাইকেলে চলাফেরায় নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুলে যেতে খুব ভালো লাগে।
সাবেক ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা জানান, বন্দী থেকে মুক্ত হয়ে ছিটমহলবাসীরা আনন্দে আত্মহারা। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিটমহলের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এর অর্ধেক মেয়ে শিক্ষার্থী।বানিয়ারছড়া সমন্বয়পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হরি প্রসাদ সেন বলেন, মেয়েরা বাইসাইকেলে স্কুলে আসছে। আমরাও তাদের উৎসাহ দিচ্ছি।
ফুলবাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, গত ছয় বছরে দাসিয়ারছড়ার অবকাঠামো ও জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে।
ইউএনও সুমন দাস বলেন, দাসিয়ারছড়াবাসী এখন দক্ষ, আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী। মেয়েরাও শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে।

সেপ্টেম্বর ১০,২০২২ at ২১:০১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /বল /শই