বসুন্দিয়ায় বঙ্গমাতা স্মরণে দুই শতাধিক মায়েদের ফ্রি চিকিৎসা সেবাসহ ঔষধ বিতরণ করেন ডা. নিকুঞ্জ

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার প্রেসক্লাব বসুন্দিয়ার আয়োজনে দুই শতাধিক মায়েদের মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান করেছেন। শুক্রবার দিন ব্যাপি যশোর সদরের বসুন্দিয়ায় আল-আমিন প্রি-ক্যাডেট স্কুলে এই কার্যক্রম করেন।

উক্ত মেডিকেল ক্যাম্পে ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার সাথে পুরুষদের চিকিৎসা সেবায় ছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজের ডা. রায়হানুল ফিরদাউস।

প্রেসক্লাব বসুন্দিয়ার সভাপতি আবু তাহেরের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন প্রেসক্লাব বসুন্দিয়ার প্রধান উপদেষ্টা লাবুয়াল হক রিপন। এসময় স্থানীয় প্রেসক্লাব বসুন্দিয়ার সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানসহ নেতৃবৃন্দ ও সকল সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারী বলেন, আমার স্বামী ভ্যান চালক। অর্থের অভাবে শহরে গিয়ে ভালো চিকিৎসা নিতে পারিনা, ডা. সাহেব আমাদের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছেন এতে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে।

অন্য এক নারী বলেন, বর্তমান সময়ে আমরা কল্পনাও করতে পারিনা এভাবে পল্লীতে এসে একজন অধ্যাপক ডা. আমাদেরকে এভাবে ফ্রি চিকিৎসা ও ফ্রি ঔষধ দিবেন। আমিসহ আমরা ডা. সাহেবের জন্য দোয়া ও কৃতজ্ঞতা জানায়।

অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদারের ভাষ্যমতে, গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষ গাইনী ও প্রসূতি মায়েরা নানা জটিল কঠিন রোগে ভুগলেও অসচেতনতাসহ অর্থের অভাবে শহরে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে পারেন না। তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে প্রায় প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে তাদের সুচিকিৎসা প্রদানের চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে ফ্রি চিকিৎসা সেবার সময় ও দিন আরো বাড়ানে হবে।

তিনি বলেন, পত্র পত্রিকায় সংবাদ হওয়ার কোন আগ্রহ নেই। পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জীবন যাপন করছি। সৃষ্টিকর্তা কর্মময় জীবনে মানুষের আর্শীবাদ সৎ ভাবে জীবন যাপনের সমার্থ দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, একটি দেশ বাংলাদেশ দিয়েছেন। তাঁর মহীয়সী সহধর্মীনিকে আমি প্রণাম ও সালাম জানায়। সেই মাতা বঙ্গমাতার অনুপ্রেণায় ২০১৬ সাল থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে প্রায় প্রতি শুক্রবার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি। এতে গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের ফ্রি স্ত্রী, প্রসূতিসহ গাইনি চিকিৎসা ও পরামর্শ সুনিশ্চিত করার চেষ্টা মাত্র। যতদিন জীবত থাকবেন তিনি চেষ্টা করবেন ফ্রি চিকিৎসা অবহ্যত রাখতে বলে জানান অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার।

বিশেজ্ঞরা উল্লেখ্য করেন, সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন গাইনী বিভাগের চিকিৎসকরা। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া গর্ভবতী নারীদের মধ্যে বিকাশ হওয়া একটি বিরল মেডিকেল অবস্থা। এমন রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তারা। কেননা এমন রোগীর অস্ত্রোপচার মানেই ২০ ব্যাগেরও বেশি রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়া রোগীর মৃত্যুঝুঁকি থাকে। কিন্তু বিকল্প পদ্ধতিতে রক্তপাত ছাড়াই সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচার করে রেকর্ড গড়েছেন যশোরের গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তিনিই প্রথম এমন পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে সাফল্য অর্জন করেছেন বলে দাবি করেছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

এছাড়াও এই চিকিৎসক বিভিন্ন সময়ে নানা স্ত্রী, প্রসূত ও গাইনী রোগের জটিল জটিল সমস্যা চিকিৎসা সেবায় সুস্থ করে তুলেছেন। তিনি অপারেশনের মাধ্যমে এক প্রসূতিরা চারটি শিশুকে পৃথিবীর আলো সুস্থ ভাবে আনতে সক্ষম হন।

উল্লেখ্য, যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার চিকিৎসা সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। গাইনী ও প্রসূতি নারীদের নানা জটিল কঠিন রোগে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চিকিৎসা সাফল্যে নানাভাবে হয়েছেন পত্র পত্রিকার শিরোনাম। অবসরে গিয়েও ২০১৬ সাল থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে তিনি বাঘারপাড়া ও অভয়নগর অঞ্চলের গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের ফ্রি স্ত্রী, প্রসূতিসহ গাইনি চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। তার এ মহতী উদ্যেগে স্থানীয়রা নানা ভাষায় চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।