দৌলতপুরে বন্যায় ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী, ৮ স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের একটি গ্রামে পানিবন্দী মানুষের ডিঙি নৌকায় যাতায়াত।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে পদ্মাপাড়ের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ৩শ বিঘা আবাদি জমি। ব্যাপক বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার নদীতীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। বন্যায় ৮টি প্রাইমারি স্কুুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশার কথা শোনাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

বন্যায় উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষজন চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে। তলিয়ে যাচ্ছে মাষকলাই, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের আবাদি ফসল। পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে অন্তত ২০টি গ্রামের বহু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত দুইদিনে বেশকিছু বাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে- চিলমারী, বাজুমারা, চরচিলমারী, খারিজাথাক, আতারপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, ঠোঁটারপাড়া, সোনাতলা, চরসোনাতলা গ্রামসহ স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ভুক্তভোগীরা জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কাটছে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটও দেখা দিতে শুরু করেছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। এ ছাড়া গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন দুর্গত এলাকার লোকজন। বাড়িঘরের চার পাশ পানিতে ডুবে থাকায় এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছোট-বড় নৌকা ও ডিঙি নৌকাই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বছর বন্যার আশঙ্কা না থাকায় বিভিন্ন মৌসুমি ফসল আবাদের জন্য অনেক চাষি জমি প্রস্তুত করেছিলেন। যা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে অন্তত ৩শ বিঘা আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে মাষকলাই, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। বেশকিছু উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে চরের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু জানান, তার ইউনিয়নের পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পানি ও নদীর পাড় সমান সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে আরো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ।

চিলমারী ইউনিয়নে বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়া একটি বসতবাড়ি।

চিলমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ইকবাল আহমেদ জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ওই ইউনিয়নে নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদি জমি, কয়েকশ ঘরবাড়িসহ চরচিলমারী বিজিবি ক্যাম্প, জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। বেশকিছু বসতঘরেও বন্যার পানি ঢুকে পড়তে শুরু করেছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, প্রতিদিন নদীতে গড়ে ১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে পানি বেড়েছে অন্তত ৮২ সেন্টিমিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা হচ্ছে, ১৪ দশমিক ২৫ মিটার। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের ১৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ পর্যন্ত পানির প্রবাহ ছিল। বর্তমানে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তার ইউনিয়নের অন্তত ১৮টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। চলাচলের রাস্তাঘাটও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বা ক্লাস গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি মাদ্রাসা ও তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না। বন্যাদুর্গতদের সরকারি সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান জানান, চিলমারী ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা তারা হাতে পেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তালিকা এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। চিলমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে ১১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্য ইউনিয়নে সরজমিনে খোঁজখবর নেয়ার পর এ সস্পর্কে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

সেপ্টেম্বর ০৬,২০২২ at ২১:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /এসম /শই