সিলেটের ৫৬.৫৪ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘সেবা খাতে দুর্নীতি জাতীয় খানা জরিপ ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সিলেটর মানুষ সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হচ্ছে ৫৬.৫৪ শতাংশ পরিবার। ১৭টি সেবা খাতে ঘুষ প্রদানের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সিলেটের প্রতিটি পরিবারকে গড়ে দুই হাজার ৫৮০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। যে সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন বিআরটি, সিলেটের আঞ্চলিক পাসপোর্টস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়।

টিআইবির প্রতিবেদনে সিলেটসহ দেশের আটটি বিভাগে মোট ১৭ ধরনের সেবা খাতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। এই দুর্নীতির সময় কাল ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এসব দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে ঘুষ, জোরপূর্বক টাকা আদায়, প্রতারণা, দায়িত্বে অবহেলা, স্বজনপ্রীতি, সময়ক্ষেপণসহ বিভিন্ন হয়রানি।

আরো পড়ুন :
চুরিই ৪ বোনের পেশা, উত্তরা থেকে গ্রেফতার

টিআইবির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৭৮.১৮ শতাংশ মানুষ বিআরটির সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৭২.১৪ শতাংশ মানুষ। ৬০.৯৪ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থা থেকে সেবা নিতে গিয়ে।

অন্যদিকে সিলেটে টিআইবির জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫১.১২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তায়, ৪৭.৩২ শতাংশ উত্তরদাতা বিচারিক সেবায়, ৪০.২৫ শতাংশ উত্তরদাতা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এছাড়া সিলেটের ২১.৩২ শতাংশ উত্তরদাতা স্বাস্থ্যে,২১.৮১ শতাংশ উত্তরদাতা ভূমি সেবায়, ১৫.০২ শতাংশ উত্তরদাতা বিদ্যুত সেবায়, ১৭.৮২ শতাংশ উত্তরদাতা শিক্ষায়, ৩৩.৬১ শতাংশ কৃষিতে, ১৮.৬১ শতাংশ কর ও শুল্কে, ৭.৫১ শতাংশ এনজিওতে, ২০.৩২ শতাংশ গ্যাসে, ৫১.১২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তায়, শুন্য.৯২ শতাংশ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে এবং ২.২১ শতাংশ অন্যান্য ক্ষেত্রে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন।

সিলেটে ২০২১ সালে বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে খানা বা পরিবারকে গড়ে ২ হাজার ৫৮০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে টিআইবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটে গত বছর ২৬. ৭০ শতাংশ খানা বা পরিবার ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেন করতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ শতাংশ খানা ঘুষ দিয়েছে পাসপোর্ট সেবার জন্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে ৪৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং বিআরটিএ সেবার জন্য ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ খানা বা পরিবার ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

অন্যদিকে ১৮.৩২ শতাংশ উত্তরদাতা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে, ১.১১ শতাংশ উত্তরদাতা বিচারিক সেবায়, ১২.২৫ শতাংশ উত্তরদাতা ভূমি সেবায়, ৭.৪০ শতাংশ উত্তরদাতা শিক্ষায়, ১৬.০৭ শতাংশ কর ও শুল্কে, ০.৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা বিদ্যুৎ সেবায়, ৪.৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা স্বাস্থ্যে, ১০.৭৬ শতাংশ গ্যাসে, ৬ শতাংশ ইন্সুরেন্সে, ০.৩৬ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে, ০.৩৯ শতাংশ অন্যান্যে, ০.৩১ শতাংশ এনজিও এবং ১৩.৫৬ শতাংশ কৃষিসেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

জরিপে অংশ গ্রহণকারীদের বেশির ভাগই মনে করেন, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। তারা ঘুষ দেন মূলত হয়রানি বা ঝামেলা এড়াতে।

টিআইবির জরিপে আরও দেখা গেছে, সিলেট বিভাগে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন পুরুষই বেশি ৫৭.০৩ শতাংশ। নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৫৪.১৬ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেটে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৫১.৬ শতাংশ পুরুষ ও ৭০.৭ শতাংশ নারী।

বিআরটিতে অবশ্য ১০০ শতাংশ পুরুষই দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, নারী ৭৭.৬ শতাংশ। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থা থেকে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৫০.৪ শতাংশ পুরুষ ও ৬০.২ শতাংশ নারী। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৪৮.৩ শতাংশ পুরুষ ও ৫৬.৫ শতাংশ নারী, কৃষি সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৪০.৮ শতাংশ পুরুষ ও ৩২.৯ শতাংশ নারী।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণে ৩২.২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬.৭ শতাংশ নারীই দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে সিলেটে বিচারিক সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির কবলে পড়েছেন ৯.৮ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ শতাংশ নারী।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটে গেল বছরে ৫৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি (৪২.২৬ শতাংশ) দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

এর পর ৩৫.৬৭ শতাংশ রয়েছেন ৪৬ থেকে ৫৫ বছর বয়সীরা। ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা ৩২.৯৪ শতাংশ, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা ২৭.৬৬ শতাংশ এবং ৬৫ বছর বয়সীরা ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। তবে ১৮ বছরের নিচের বয়সীরা তুলনামূলক কম (১৪.৩ শতাংশ) দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

টিআইবির পরিচালিত জরিপের সময়ে সিলেট বিভাগের চার জেলায় শহরের চেয়ে বেশি ঘুষের শিকার হয়েছেন গ্রামের মানুষ। শহরের প্রতিটি পরিবারকে গড়ে দুই হাজার ১৩৭ টাকা করে ঘুষ দিলেও গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে ৩ হাজার ৩২৫ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে শহরে ৫২.৬১ শতাংশ এবং গ্রামে ৫২.৫৩ শতাংশ সেবা গ্রহীতা বা পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ করা হলেও ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। টিআইবির পরিচালিত জরিপে ২০২১ সালে সিলেটে সাধারণ মানুষের তুলনায় শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে এমন খানাগুলোও বেশি ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এই হার ৬৮.৮৭ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর ০৬,২০২২ at ১৮:৩১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /কম /শই