খেয়া নৌকাই ভরসা ৪০ গ্রামের মানুষের

দুই পাড়ে কমপক্ষে ৪০ গ্রামের মানুষের বসবাস। যাদের নিকটবর্তী জেলা ও উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম কুমার নদে আড়ুয়াকান্দি ঘাটে খেয়া পারাপার। এলাকায় রয়েছে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই আড়–য়াকান্দি ঘাটের খেয়া পার হয়ে স্কুল-কলেজে যায় শিক্ষার্থীরা।

বৃষ্টি এলে আর প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না তারা। ঘাটের ছয় কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো সেতু। অর্ধশত বছর কষ্ট করে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কুমার নদের দুই পাড়ের বাসিন্দারা চলাচল করছেন।

তাদের একমাত্র ভরসা আড়ুয়াকান্দি-বিষ্ণুদিয়া ঘাটের এই খেয়া নৌকা। দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা পূরণ হয়নি। ফলে তাঁদের ভোগান্তিরও শেষ হয়নি।

শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে একটি পাকা সড়ক ফাজিলপুর বাজার হয়ে ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর বাজারে মিশেছে। সড়কটি কুমার নদের ধার ঘেঁষে চলে গেছে। এই নদের ওপর শৈলকুপা শহরে দুটি সেতু রয়েছে। আর ১২ কিলোমিটার দূরত্বে হাটফাজিলপুর রয়েছে আরেকটি সেতু। মাঝে আড়ুয়াকান্দি ও বিষ্ণুদিয়া ঘাট পার হতে হয় খেয়ানৌকায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় করে নদ পার হচ্ছেন এলাকার লোকজন। খেয়াঘাটে বসে কথা হয় আড়ুয়াকান্দি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদের উত্তরে বিষ্ণুদিয়া, দামুকদিয়া, মাধবপুর, দোহা-নাগিরাট, শিতালী, দলিলপুর, কমলনগর, বগুড়া, লাঙ্গলবাঁধ, নন্দিরগাতি, ধাওড়া, ধলহরাচন্দ্র, বরিয়া, ছাঁইভাঙ্গা, কুশবাড়িয়া, ডাউটিয়া প্রভৃতি গ্রাম রয়েছে। আর দক্ষিণে রয়েছে আড়ুয়াকান্দি, রয়েড়া, ভান্ডারীপাড়া, বকশীপুর, শেখড়া, গোপালপুর, বাগুটিয়া, নাকোইল, ফলিয়া, রঘুনন্দনপুর, আশুরহাট, নিত্যানন্দপুর, সাবাসপুর ও হাটফাজিলপুর। খেয়াঘাটের দুই পাশের অন্তত ৪০টি গ্রামের মানুষ পারাপার হন।

খেয়াঘাটের পাশে রয়েছে আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উমেদপুর বালিকা বিদ্যালয়, বাগুটিয়া জরিপ বিশ্বাস কলেজ ও বিষ্ণুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরও গড়ে উঠেছে সীমান্ত বাজার, নাগিরহাট বাজার, রয়েড়া বাজার, বকশিপুর বাজার ও শেখরা বাজার।

স্থানীয় বাসিন্দা জামির হোসেন বলেন, এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার রয়েছে। কিন্তু মানুষের একটাই কষ্ট, কুমার নদের ওপর সেতু নেই। ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের ছেলেমেয়েদের এই ঘাট পার হতে হয়। এতে নদের পানি বেড়ে গেলে প্রায়ই নৌকায় পানি উঠে যায়। এতে স্কুলগামী বাচ্চাদের কাপড় ভিজে যাওয়ার ভয়ে প্রায়ই স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। আবার পানি কমে গেলে নৌকা চলে না। তখন বাঁশের সাঁকো তৈরি করতে হয়। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় শিশুদের।

বিষ্ণুদিয়া গ্রামের তুহিন রেজা বলেন, ঘাটে একটি মাত্র নৌকা। একটু বেশি যাত্রী না হলে নৌকা ছাড়েন না মাঝি। ফলে যাত্রীদের প্রায়ই দীর্ঘ সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে এই ঘাটে খেয়া পার হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই নৌকায় পানি উঠে যায়। তখন অনেক ছেলে-মেয়ে ভয়ে প্রায়ই স্কুলে যেতে চায় না। শুষ্ক মৌসুমে আবার পানি কমে যাওয়ায় নৌকা চলতে পারে না। তখন বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়।

খেয়াঘাটের মাঝি দবির উদ্দিন জানান, শুধু আয়ের জন্য নয়, জনসাধারণকে পারাপার করতে পেশাটা ধরে রেখেছেন। সরকারিভাবে এই খেয়াঘাট বন্দোবস্ত দেওয়া হয় না। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালান।

এলাকাবাসী জানান, সেতু না থাকায় পণ্য পরিবহনেও তাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। বর্তমানে প্রতি মণ কৃষিপণ্য বাজারে নিতে তাদের পরিবহন খরচ হয় ৫০-৬০ টাকা। অনেক পথ ঘুরে আসতে হয়। অথচ সেতু হলে ওই মাল পরিবহনে খরচ হবে মাত্র ১০ টাকা।

এলজিইডির ঝিনাইদহ নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার উদ্দিন জানান, এখানে সেতু নির্মাণের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব কি করা যায়।

সেপ্টেম্বর ০৫,২০২২ at ১৭:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /মজ /শই