লালমনিরহাট এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের সরকারী গাড়ী, বিলাসবহুল জীবন যাপনসহ নানা অনিয়ম- দুর্নীতি নিয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে লিখিত অভিযোগ করেছেন জনৈক আবুল কাশেম।

সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ লালমনিরহাটে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং বিগত অর্থ বছরের সড়ক রক্ষনাবেক্ষনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হলেও অবৈধ অর্থ নিয়ে কতিপয় পছন্দের ঠিকাদারদের বিল প্রদানে সহযোগিতা করেন।

এলজিইডির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে লালমনিরহাট এলজিইডি ভবনের নীচ তলায় সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীর অফিস কক্ষ থাকলেও তিনি যোগদানের পর পরই প্রভাব খাটিয়ে দ্বিতীয় তলায় একটি রুম নতুন আঙ্গিকে ডেকোরেশন করে এসি, দরজা জানালায় থাইসহ সাটানো হয়েছে দামী দামী পর্দা। তিনি সরকারী বরাদ্ধের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রভাবশালী ঠিকাদারদের কাছে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করে অত্যাধনিক এ ডেকোরেশন করেন তিনি।

আরো পড়ুন :
বিএনপি নেতা ওয়ারেছ চেয়ারম্যানের নিঃর্শত মুক্তি দাবী

জানাগেছে, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন লালমনিরহাটে যোগদান করেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ। তিনি উক্ত অফিসে যোগদানের পর তার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ সহ বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

এমনকি এলজিইডি লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম সহ কাউকে মানেন না। তার কাছে সবাই যেন একেবারে অসহায়। ঠিক-ঠাক অফিস করেন না। তিনি তার ইচ্ছামতো চলাফেরা করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখভাল ও নজরদারির জন্য এলজিইডির গাড়ি জেলা ভিতরে ব্যবহারের যৌক্তিকতা আছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।

কিন্তু সে গাড়ি ব্যবহারে নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতিক্রমে সহকারী প্রকৌশলীরা জেলার ভিতরে ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া সরকারি ভাবে সহকারী প্রকৌশলীদের নামে কোন গাড়ি বরাদ্দ নেই। অথচ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ এলজিইডিরদুই দুটো গাড়ি বীরদর্পে ব্যবহার করছেন।

ওই সব গাড়ির চাবি চালক ও মেকানিক্যাল ফোরম্যানের নিকট জমা রাখার বিধান থাকলেও তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের কাছে রাখেন। আব্দুল মান্নাফ চালকসহ সার্বক্ষণিক এলজিইডির গাড়ি ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি এর জবাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অজানা নয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুত্র জানান, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ ঢাকা মেট্রো-হ-১১-৭৬১৪ নম্বর সরকারী গাড়িটি ও তার চালক আলম হোসেনকে নিয়ে লালমনিরহাট থেকে পঞ্চগড়ে প্রতিমাসেই পরিবারকে নিয়ে ২শ কিলোমিটার সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান।

আবার সেই সরকারী গাড়িতে চড়ে গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরেন। এভাবেই চলতি বছরের শুধুমাত্র জুলাই মাসে ৫শ ৬০ লিটার গাড়ির জ্বালানি, চালক, মেরামতসহ বিভিন্ন খাতে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে অধিদপ্তরের। অথচ ওই গাড়িতে ৫শ ৬০ লিটার জ্বালানি তেল দিয়ে প্রায় ৪ হাজার ৪শ কিঃ মিঃ চলাচল করা সম্ভব। যা গাড়িতে রাখা লকবইটি জব্দ করলে প্রমান মিলবে।

তাছাড়াও ওই গাড়ীতে চড়ে মাসে মাসে পরিবারসহ রংপুরে শপিং করা, মেয়ের স্কুল যাতায়াত,ব্যক্তিগত কাজে জেলার বাহিরে সফর, রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে অহেতুক ঘোরাঘুরি করে সরকারি সম্পদ এভাবেই অপচয় করেই চলছেন। সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের সরকারী গাড়ি বিলাসবহুল জীবন যাপনের আয়ের উৎস কি, এনিয়ে নানান গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে এলজিইডি অঙ্গনে। তবে তার ওই গুঞ্জনের পিছনে লুকিয়ে ছিল বড় ধারণের দুর্নীতি।

সেই দুর্নীতির ফিরিস্তি ঘাঁটতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দেখভালের নামে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আব্দুল মান্নাফ যে মোবাইল ব্যবহার করেন, যার একটির মুল্য ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা,তার গায়ের পোষাক দামী, বাসায় দামী আসবাপত্র, স্ত্রী ও সন্তানদের চলাফেরা দেখলে মনে হয় তারা রাজা-বাদশার আমলীয় প্রতাপশালী।

এতো বিলাসবহুল জীবন যাপনের অর্থ তার বেতনের টাকায় নয়, বড় অর্থের অংশটা আদায় করেন ঠিকাদারদের নিকট থেকে কাজের ভুল-ভাল ধরে। এভাবে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বাড়ি-গাড়ি, নামে-বেনামে সম্পত্তিসহ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। যা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে আব্দুল মান্নাফ লালমনিরহাটে যোগদানের পর থেকে কি কি অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক শর্তে ক’জন স্থানীয় এলজিইডির ঠিকাদার বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে আমরা সন্তোষ্ট না। কারণ তার কাছে টাকাই সব।

উপরের বড়কর্তার সাথে তার গভীর সক্ষতা রয়েছে। ফলে ক্ষমতার দাপটে উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে টাকা, কোন ফাইলে স্বাক্ষর নিতে গেলেও টাকা দিতে হয়। কাজ নিম্নমানের হলেও কোন সমস্যা নেই। আব্দুল মান্নাফকে টাকা দিলে সবেই ভাল বলে স্বাক্ষর করেন। এমনিতে নির্মাণ সামগ্রী দাম উর্দ্ধগতি তার উপর আব্দুল মান্নাফের অনিয়ম, দুর্নীতিতে আমরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন ধরেননি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম বলেন, সরকারি গাড়ী নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিচ্ছি।

সেপ্টেম্বর ০৪,২০২২ at ১৬:১৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /আজ /শই