জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারকার্যে প্রশাসনের গাফলতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত সাংবাদিক রুবেল হোসেনকে আবাসিক হলের গেস্টরুমে ডেকে নির্যাতন ও মোবাইল তল্লাশির ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাবিতে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।

আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত না হলে রোববার প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করার ঘোষণা দেন জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন।

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়ন, শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ, শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন।

আরো পড়ুন :
বগুড়ায় ২দিন ব্যাপি ফ্রি মেডিক্যাল স্ক্যাম্পের উদ্বোধন

এর আগে গত ২ আগস্ট রাতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের গেস্টরুমে ডেকে সাংবাদিক রুবেলকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদ হক ও একই বিভাগের আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান বিন হাবিব,

আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্‌, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের মীর হাসিবুল হাসান রেশাদ এবং ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে। ওই আট কর্মীকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ওই রাতেই শাখা ছাত্রলীগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি, দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হল প্রশাসনের পদত্যাগ, তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা এবং হলের নিয়ন্ত্রন হল প্রশাসনের হাতে নেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির ফয়সাল বলেন, এই প্রশাসন গন্ডারের চামড়ার মতো হয়ে গেছে। প্রশাসন বলেছে গণরুম সংস্কৃতি রোধে তারা জিরো টলারেন্স কিন্তু কোনো হল প্রশাসন এই ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপই করছে না। হল প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার নির্দেশনা থাকলেও তারা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় তাদেরকে খুজে পাওয়া যায় না।

হলের সিট বন্টনে প্রশাসন কোনো ভূমিকা পালন করে না। হলের সিট লিস্ট করা, বন্টন করায় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপ করে। এই অথর্ব প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে নাই পারে তাহলে তাদের উচিৎ পদত্যাগ করা।’

জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, গনতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা। পরিতাপের বিষয় এ সাংবাদিকরা সবসময়ই নির্যাতিত আর নিপীড়িত হয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদেরকে আজ রাস্তায় নেমে আসতে হচ্ছে।

এটা প্রমাণ করে পুরো একটা সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার এক মাস হয়ে গেল অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায্য বিচার প্রদানে ব্যার্থ হয়েছে। ঘটনার দিন রাতে হল প্রশাসন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাউকেই আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত করতে পারিনি। ঘটনার রাতে ছাত্রলীগ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তাদের ৮ জন কর্মীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

কিন্তু দিনের আলোর মত পরিষ্কার ঘটনায় তদন্ত কমিটি নাকি কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আামাদের দাবিগুলো না মানা হলে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে।

জাবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাবি সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামী আল জাহিদ প্রীতম, জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক নির্যাতনের ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন পাঁচ কার্যদিবস সময় বেধে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ছিলো। কিন্তু অপূর্নাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি।

সেপ্টেম্বর ০২,২০২২ at ১৮:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /নর /শই