পাখিমারা বিলে বাঁধ সংস্কার ও টিআরএম চালু না হওয়ায়……..কপোতাক্ষ খননে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে!

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার ও টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু না হওয়ায় ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প।

প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে পাখিমারা বিলের কৃষকদের ১৫৫৬.৬২ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই বছরের জন্য ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অদ্যবধি কোন কৃষক তা পায়নি। কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকার কাজ চলছে শম্বুক গতিতে।

এদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় বেশিরভাগ জমির মালিকরা তাদের জমি দখল করে চাষাবাদ ও মাছ চাষ শুরু করায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় জনগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উক্ত বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার পূর্বক টিআরএম চালু, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সাথে নদী পুনঃখননের দাবি জানয়িছেন।

আরো পড়ুন :
জাবিতে বাঁধনের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

জানা গেছে, জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ নামের একটি বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন করেন। ২৬১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে এবং সমাপ্ত হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে।

প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিলঃ ৯০ কি.মি নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেসরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন। পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে ১৫ লক্ষ অধিবাসী।প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জুলাই’২০২০ থেকে জুন’২০২৪ পর্যন্ত ৪ বৎসর মেয়াদী ২য় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।

দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটির মূল কাজ হলো পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং নদী খনন। ২য় পর্যায়ের কাজের ২ বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি টিআরএম বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি নেই। এদিকে ২০২০ সালে জলোচ্ছ¡াস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে।

মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। ভেসে যায় ফসলক্ষেত, মৎস্য খামার এবং চলাচলের রাস্তা। বাঁধের পরিণত হয় ভগ্নদশায়। এমতাবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থে ও জনগণের দাবীর মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে বিগত ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখ বেধে দিয়ে টিআরএম বন্ধ করা হয় যা এখনও বন্ধ রয়েছে। বাঁধ মেরামতের টাকা বরাদ্দ হলেও তা ক্ষতিপূরণ চালু না করার কারণে জনগণের চাপের মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি।অন্যদিকে ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে বিভিন্ন ধরণের ভোগান্তির কারণে এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ।

বিল অধিবাসীদের মতে, পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ উপকৃত হলেও তাদের দুঃখ-দুর্দশা ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি চলমান রয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিআরএম বিল অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।

এসময় পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার, ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সাথে নদী পুনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকল মহলের নিকট পানি কমিটি, সুশিল সমাজ, সর্বস্তরের জনগণ জোর দাবি জানান।
ভুক্তভোগি বালিয়া গ্রামের আব্দুল আলিম মোড়ল, ফিরোজ সানা জানান, তাদের ৮ বিঘা করে জমি টিআরএম বিলে আছে। ২০১১ ও ২০১২ সালের টাকা সরকারের নিকট থেকে বুঝে পেযেছে।

এরপর ২০১৩ সাল থেকে অদ্যবধি কোন ক্ষতিপূরণের টাকা তিনি পাননি। অনেক বার সাতক্ষীরা ডিসি অফিসে যোগাযোগ করেছে কিন্তু ডিসি অফিস থেকে একটাই উত্তর এসেছে ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো জমা হয়নি, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

গৌতমকাটি গ্রামের মোঃ আলাউদ্দীন সরদার বলেন, তাদের এই বিলে ২২ বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে মাত্র এক বছরের। বর্তমানে সেখানে তিনি মাছের ঘের করেছেন।

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, কপোতাক্ষ খননের প্রথম পর্বে ২৬১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্বে ৫৩১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা সরকার বরাদ্দ দিলেও ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিআরএম এলাকার চাষীরা প্রথম দুই বছরের ক্ষতিপূরণ পেলেও পরবর্তীতে আর পায়নি

। ডিসি অফিসে খোঁজ নিয়ে যানা যায়, দ্বিতীয় ফেইজের টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড জমা না দেয়ায় কৃষকের ক্ষতিপূরণ দিতে পারছেন না। এহেন অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, ঠিকমতো ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় পাখিমারা বিলের কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় ফেইজে নদী খনন সাতক্ষীরা অংশে প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কাজ আপাতাত বন্ধ রয়েছে।

টিআরএম এলাকার ভুক্তভোগিদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, রেভিনিউ খাতে টাকা ধরা আছে। কৃষকরা ডিসি অফিস থেকে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবে। তবে দ্বিতীয় ফেইজে দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও টিআরএম কেন চালু হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষকরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় সেখানে কোন কার্যক্রম করা যাচ্ছে না।

আগস্ট ২৮,২০২২ at ২০:০৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /রজ /শই