বদলগাছীতে একজনের চাকরি, করছেন আরেকজন

কাগজে কলমে চাকরি করেন একজন। কিন্তু বাস্তবে সশরীরে চাকরি করছেন অন্যজন। বলা চলে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করানো হচ্ছে।

যেন ‘কার চাকরি কে করে’ এমন একটা অবস্থা। এভাবেই একজনের পরিবর্তে অন্যজন কাজ করছেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ড বয় হিসেবে। কর্মকর্তার যোগসাজসে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে।

তবে কে সেই ওয়ার্ড বয় এক কর্মকর্তা ছাড়া হাসপাতালের অন্য কোন ওয়ার্ড বয় বা সেবিকারা কেউ তাকে চিনেনা। এ অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবী করেছেন সচেতন মহল। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে গত তিন বছর থেকে প্রধান সহকারী পদে চাকরি করছেন মো. আব্দুস সালাম।

আরো পড়ুন :
জবিতে আবৃত্তি সংসদের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী অনামিকা-অমৃতা-জাহেদ

একই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসাবে রয়েছেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন। তিনি গত ২০২০ সালের মার্চের ২৩ তারিখে যোগদান করেন ওয়ার্ড বয় হিসেবে । তার বাড়ি নওগাঁ জেলা সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের মকরামপুর গ্রামে। থাকেন নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ মহল্লার শহীদুলের মোড় সংলগ্ন ‘এ ব্লকের’ পাশে মাসুদ রানার ভাড়া বাসায়। যোগদানের পর থেকে ইয়াসমিন হাসপাতালে অনুপস্থিত।

ইয়াসমিন নামে কোন ওয়ার্ড বয় হাসপাতালে আছে কিনা কেউ তাকে চিনে না। ইয়াসমিন এর পরিবর্তে বদলগাছী উপজেলা সদরের মাস্টার পাড়ার বাসীন্দা রবিউল ইসলাম এর স্ত্রী বেদেনা আক্তার মাসে চার হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে কাজ করছেন। হাসপাতালের কেউ তাকে না চিনলেও প্রতি মাসের ৪-৫ তারিখে বেতন নিতে এবং ১৫ তারিখে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে আসেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতার যোগসাজসে দিনের পর দিন ও বছরের পর বছর এই অনিয়ম চলে আসছে।

হাসপাতলের সিনিয়র নার্স রেহেনা এবং এমএলএসএস রুসিয়া বেগম বলেন, হাসপাতালে অনেক বছর ধরেই চাকরি করছি। ইয়াসমিন নামে কোন ওয়ার্ড বয়কে আমরা চিনি না। তবে বেদেনা আক্তার নামে একজন হাসপাতালে কাজ করে। তার কোন পদ-পদবি নাই।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রধান সহকারী মো. আব্দুস সালাম বলেন, নিয়োগের উপর মামলা থাকায় স্ত্রীর (ইয়াসমিন) এর চাকরিতে যোগদান করতে দেরি হয়। পরে হঠাৎ করে মন্ত্রনালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয় দ্রæত কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। এ কারণে ওই সময় হাসপাতালে যোগদান করে। এরমধ্যে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সশরীরে হাসপাতলে আসতে পারে না। কর্তৃপক্ষের অনুমোতি সাপেক্ষে স্ত্রীর পরিবর্তে মাসে ৪ হাজার টাকা বেতনে বেদেনা নামে একজনকে রাখা হয়েছে।

শহরের জনকল্যাণ মহল্লার শহীদুলের মোড় সংলগ্ন ‘এ বøকের’ পাশে মাসুদ রানার ভাড়া বাসায় দু’দিন ইয়াসমিন এর খোঁজ নিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও স্বামী আব্দুস সালাম রিসিভ করেন। বাসার নিরাপত্তা প্রহরী (সিকিউরিটি গার্ড) সুজন জানায় তাদের ঘরের দরজায় তালাবদ্ধ।

এ ব্যাপারে হাসপাতালে পরিবর্তে কাজ করা বেদেনা আকতার বলেন, যিনি (ইয়াসমিন) এখানে চাকরি করেন তার স্বামী (আব্দুস সালাম) আমাকে এখানে রেখেছেন। মাসের বেতন ওঠানোর পর সেখান থেকে আমাকে চার হাজার টাকা বেতন হিসেবে তারা দেন। এছাড়াও বিপদে আপদে বাড়তি কিছু টাকাও দিয়ে থাকেন।

উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার শামিম হোসেন বলেন, হাসপাতালে একজনের চাকরি আর করে আরেকজন আসলে কিভাবে কাজ করে। এটা কোন নিয়মের মধ্যেই পড়েনা। এবিষয়টি কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।
কোলা ইউপির বাসিন্দা পরিবানু, সমুন বলেন, বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অনিয়ম দূর্নীতিতে ভরে গেছে। যে যার ইচ্ছে মতো কাজ করছে।

বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। মানবিক কারণেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এখন ঠিক করে দেওয়া হবে। তবে তার যোগসাজসে একজনের পরিবর্তে অন্যজন কাজ করছেন এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

আগস্ট ২৮,২০২২ at ১২:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /দেপ /শই