সেচ দিয়ে চলছে আমন চাষাবাদ বাড়ছে লোকসানের শঙ্কা

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদের শুরু থেকেই কৃষকের সাথে যেন চলছেই প্রকৃতির বৈরীতা। বীজতলায় ধান বীজ বপনের সময় টানা বৃষ্টির হানা। এরপর উজানের ঢলে সৃষ্টি হয় বন্যা ব্যাহত হয় জমিতে চারা রোপণ কাজ।

বন্যার ধকল কাটিয়ে যখন জমিতে চারা রোপণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন কৃষকেরা তখন আবারও বাধ সাধে প্রকৃতি। টানা বৃষ্টি ও বন্যার পর এবারে আবির্ভাব ঘটে তীব্র খরার। অগত্যা প্রকৃতির কাছে অসহায় কৃষকেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে জমিতে সেচ দিয়ে আমনের চাষাবাদ শুরু করেন। ইতোমধ্যে উপজেলার প্রায় সব এলাকায় শেষ হয়েছে জমিতে আমনের চারা রোপন কাজ। এখন মাঠে মাঠে ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা।

তাদের নিবিড় পরিচর্যায় ফুলবাড়ীর দিগন্ত জুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। তবুও এবছর আমন চাষাবাদের সময় সার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় লোকসানের শঙ্কা কৃষকের।

আরো পড়ুন :
ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে
সিটি করপোরেশনগুলোতে ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আমনের ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। কেউ জমিতে সার ছিটাচ্ছেন। কেউ ক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছেন। অনেকেই ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প চালু করে ধানের ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন।

আমন চাষাবাদের বিষয়ে জানতে কথা হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে। বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খরার কারণে আমন চাষাবাদ করতে বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে। বাজারে সব ধরনের সারের দাম বেশি। জমিতে নিড়ানি দেয়ার জন্য শ্রমিকদের দ্বিগুণ দাম দিতে হচ্ছে। এতো টাকা খরচ করে চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া একেবারে অসম্ভব।

সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান খন্দকার বলেন, তিন বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছি। বর্তমানে ক্ষেতের অবস্থা ভালো আছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে আমন ধান চাষাবাদ করতে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। ভালো ফলন হলেও চাষাবাদ খরচের টাকা তুলতে পারবো কিনা শঙ্কায় আছি। আর যদি ফলন ভালো না হয় তাহলে তো মহাবিপদ!

পূর্ব ধনিরাম গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুরু থেকে বাড়তি খরচ করে জমিতে সেচ দিচ্ছি। ফলে আমন চাষাবাদে দিনে দিনে খরচ বেড়েই চলছে। বাজারে প্রয়োজনীয় সার কীটনাশকের দামও বাড়তি। ইউরিয়া প্রতি বস্তা ১১৮০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বেড়েছে পটাশ এমওপি সহ সব ধরনের সারের দাম। ভালো ফলনের আশায় বাড়তি খরচ করে ক্ষেতের পরিচর্যা করছি। ক্ষেতের অবস্থাও আপাতত ভালো আছে। তবুও বাড়তি খরচের কারণে চাষাবাদে লোকসানের শঙ্কায় আছি।

নাগদহ এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন, নুরুল ইসলাম ও আবুল হোসেন বলেন, এবারের আমন চাষাবাদের সময় হঠাৎ করে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে টিলার মালিকরা জমি চাষের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চারা রোপণের জন্য বিঘা প্রতি শ্রমিকদের ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। এখন জমিতে সার প্রয়োগের সময় হয়েছে। বাজারে সব ধরনের সারের দাম বেশি হওয়ায় সার কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। লাভের আশায় চাষাবাদ শুরু করে এখন লোকসানের শঙ্কায় আছি।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানিয়েছেন, বাজারে বিভিন্ন অজুহাতে বিক্রেতারা সরকারি মূল্যের থেকেও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। চাষাবাদের ভরা মৌসুমে সারের সরবরাহ ঠিক রাখতে ও সরকার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন কৃষকেরা।

চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদের বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে যাতে কেউ সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাজারে সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য বজায় রাখতে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ মিলে উপজেলা ব্যাপি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমাদের তৎপরতা চলমান থাকবে।

আগস্ট ২৫,২০২২ at ১৬:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /দেপ /শই