সেচ পানি দিয়ে আমন রোপনে কৃষকদের ব্যস্ততা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চলে কৃষি খাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। ভরা মৌসুমি বৃষ্টির না হওয়ায় চারিদিকে শুধু হা-হা-কার আর হা-হা-কার৷ পাশাপাশি কৃষি উপকরণের চড়া দাম, কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক কৃষক পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করলেও, অধিকাংশ কৃষকের সে ধরনের সামর্থ্য ও সুবিধা না থাকায় বেশ আবাদী জমি এখনো পড়ে থাকার কথা জানা গেছে।

আরো পড়ুন :
জাবি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনঃ অধ্যাপক আমিরের নিরঙ্কুশ জয়
দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে গুচ্ছভুক্ত মানবিক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা

কৃষকেরা জানান- বীজ, সার, কীটনাশক, তেল, জমিচাষসহ অনান্য কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে বীজ, সার, কীটনাশকে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেজালের প্রবণতাও বেড়েছে। কৃষকের সার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কেনো তদারকি করে না কৃষি অফিস। এনিয়েও কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ রয়েছে। কৃষি অফিসের সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে অনেক দরিদ্র কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকদের অভিমত।

রাজগঞ্জের হানুয়ার গ্রামের কৃষক আবু আহমেদ, শহিদুল ইসলাম সাহাদুল,হাফেজ মুস্তাফিজুর রহমান, খালিয়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল, মোবারকপুল গ্রামের কৃষক আশরাফুলসহ অনেক কৃষক চলতি বছরের বর্ষা ও চাষাবাদ নিয়ে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। তারা জানান- কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও মোটামুটি পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু সময়মত পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বড় দূঃচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

অনেক কৃষক জানান- জানি না আল্লাহর কি মর্জি। পুরো আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবণ মাসও যায় যায় অবস্থা। এখনো ভারি বৃষ্টি হয়নি। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার হালকা করে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। এই হালকা বৃষ্টির পানি আর সেচের পানি একত্রিত করে রাজগঞ্জ এলাকার কৃষক ও চাষীরা আমনের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শ্রাবণ মাস ধানের চারা রোপনের শেষ সময়। এ মাসের ভিতর চারা রোপন করা না হলে তা আর চাষ হবে না বলে কৃষকদের অভিমত। আমন চাষাবাদ মৌসুমের পাশাপাশি, আগাম বিভিন্ন জাতের শাক সবজি লাগানো যাচ্ছে না বৃষ্টি না হওয়ার কারণে। অনাবৃষ্টির কারণে রাজগঞ্জ এলাকার খাল, বিল ও জলাশয়ে আশানুরূপ পানি নেই।

এদিকে রাজগঞ্জ এলাকার অনেক জমির মালিকেরা খরচ বেশী হওয়ায় এখন তেমন চাষাবাদ করে না। জমিগুলো প্রান্তিক ও বর্গা চাষীদের কাছে আগাম টাকা নিয়ে বন্দোক দিয়ে দেন। এ কারণে জমির ভাড়া, বীজ, ট্যাক্টর ভাড়া, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরী, পরিচর্যা প্রভৃতি মিলিয়ে ধান চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান চাষীরা। রাজগঞ্জ এলাকার অধিকাংশ ভূমিহীন কৃষক, তারা ব্যাংকের অল্প সুদের ঋণ পাই না। বাধ্য হয়ে তারা বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনো রকমে চাষাবাদ চালিয়ে থাকে বলে চাষী ও কৃষকেরা জানান।

স্থানীয় ইউনিয়ন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ভগীরত চন্দ্র জানান- বৃষ্টি এবছর অনেক কম হয়েছে। বৃষ্টির ব্যাপারে কারো কিছু করার নেই। এজন্য আমন চাষীদের চলতি ভরা বর্ষা মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টির পানি না পেয়ে আমনের চারা রোপন করতে অসুবিধা হচ্ছে। কৃষকরা আর দেরি করছেন না। পানি সেচ দিয়ে আমন রোপন করে ফেলছেন অনেকে। সে অনুযায়ী আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে রাজগঞ্জ এলাকায় প্রায় সব আবাদী জমিতে আমনের চারা রোপণ করা সম্পন্ন হবে।

আগষ্ট ১৩,২০২২ at ১১:৫১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ বিল/শই