চৌগাছায় মা’য়ের লাশ ফেলে কবর নিয়ে বিরোধ, ওসি সবুজের হস্তক্ষেপে দাফন

মা’য়ের মত এই ভবেতে নাইরে আপন বা মা’জননী নাইরে যাহার এই দুনিয়ায় আপন কেহ নাই অথবা মা’য়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম দিলেও ঋণ শোধ হবেনা। এসবই যেন শুধুই কথার কথা। যশোরের চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের তজবীজপুর গ্রামের বজলু (৬৫), ফজলুরা (৭০) সেটাই করে দেখিয়েছেন।

শতবর্ষী মা’য়ের লাশ ফেলে রেখে তাঁরা বিরোধে জড়িয়েছে কোথায় দাফন করা হবে এই নিয়ে। পরে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজের হস্তক্ষেপে থানা পুলিশে গ্রামে গিয়ে তিন ভাইকে নিয়ে আসে চৌগাছা থানায়। সেখানে আপোষ-মিমাংশা শেষে রাত ১১টায় জানাজা শেষে ছেলেদের পছন্দের জায়গায়ই দাফন করা হয় সেই মাকে।

এরআগে শতবর্ষী মা’ আছিরণ বেগমের নিজ নামে থাকা দুই কোটি টাকা মূল্যের ৮বিঘা জমি পাওয়ার অব এটর্নি করে লিখে নিয়ে একটি ভাঙাচুরা টিনের ঘরে মলমূত্রের মধ্যে মা’কে ফেলে রেখেছিলো তজবীজপুর গ্রামের বজলুর রহমান ও ফজলুর রহমান নামে দুই ছেলে। বঞ্চিত করে বৃদ্ধার অন্য দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে।

পরে গত ২২ জুন একটি মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বিভিন্ন ধরনের ফল কিনে নিয়ে গিয়ে ওই মাকে মলমূত্রের মধ্যে থেকে ছেলে বজলুর রহমানের ফ্লাট বাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। এরপরও মাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতে থাকে বজলু ও ফজলু। পরে মা’য়ের একজন মেয়ে তাঁকে নিয়ে যান তাঁর (মেয়ের) বাড়িতে। তবে মা’ সেখানে না থাকতে চাওয়ায় কয়েকদিন আগে আবারও ছেলের বাড়িতে দিয়ে যান তাঁকে।

আরো পড়ুন :
চৌগাছায় মটরসাই‌কেল দূঘর্টনায় ক‌লেজ ছাত্রের মৃত্যু
শেখ কামালের জন্মদিনে ঝিকরগাছায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দোয়া মাহফিল

এরপরই ছেলে বজলু ও ফজলু আবারও মাকে সেই পড়ো বাড়িতে রেখে আসে। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার (৪আগস্ট) মৃত্যু হয় ওই মায়ের। তবে দুপুরে মা’য়ের মৃত্যু হলেও মা’ আছিরণের ওছিয়ত না মেনে অন্য জায়গায় কবর খোড়ার ব্যবস্থা করেন দুই ছেলে বজলু ও ফজলু। এনিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন মা’য়ের সেজো ছেলে জামির হোসেন, হারিয়ে যাওয়া অন্য ছেলের দুই মেয়ে, মায়ের দুই মেয়ে ও নাতি নাতনিরা।

অন্য ছেলে, নাতি ও নাতনিরা আছিরণের ওছিয়ত অনুযায়ী তাঁর স্বামীর কবরের পাশে (চৌগাছা-কোটচাঁদপুর) সড়কের তজবীজপুর গ্রামে কবরস্থ করতে চাইলেও বজলু ও ফজলু এবং তাঁদের সন্তানেরা গ্রামের মাঠের মধ্যে অন্য নির্জনস্থানে কবর খুড়ে রেখে সেখানে কবরস্থ করতে অটল থাকে। এনিয়ে তাদের মধ্যে কাইজ্জা লেগে যায়। পরে বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজের নির্দেশে পুলিশ বজলুর রহমান, ফজলুর রহমান, জামির হোসেন, মা’য়ের হারিয়ে যাওয়া চতুর্থ সন্তানের দুই মেয়ে, নাতি নাতনিদের থানায় নিয়ে আসেন।

সেখানে রাত দশটা ১৫ মিনিটের দিকে আপোষ-মিমাংশা শেষে বজলুর রহমান ও ফজলুর রহমানদের খুড়ে রাখা কবরেই আছিরণকে কবরস্থ করার বিষয়ে অন্যরা একমত হন। পরে রাত ১১টায় তজবীজপুর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে মা’কে দাফন করা হয়। চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজও জানাজায় অংশ নেন।

বিষয়টি নিশ্চত করে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, আপোষ-মিমাংশা শেষে রাত ১১টায় ওই মায়ের জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে বড় দুইছেলের খুঁড়ে রাখা কবরেই সবার সম্মতিতে তাঁকে দাফন করা হয়।

অগাস্ট ০৫,২০২২ at ২০:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মই/রারি