ফের অস্থির চালের বাজার

বেনাপোলের মেসার্স মুসা করিমের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ। গত ৭ জুলাই বেসরকারিভাবে ১১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত ৫০০ টন চাল আমদানি করেছেন। কারণ হিসেবে এই চাল আমদানিকারক বলছেন, বর্তমান বাজারদরের চেয়ে বেশি খরচের কারণে তিনি বরাদ্দ পাওয়া ১১ হাজার টন চাল আমদানি করতে পারেননি। প্রায় একই বক্তব্য সব চাল আমদানিকারকের। তবে এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্থিতিশীল করে তুলছেন দেশের চালের বাজার। সারাদেশে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আরো বাড়বে বলেও বাজারে গুজব রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে নতুন করে চালের দাম বাড়ায় চরম বিপাকে ভোক্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে লক্ষ্য অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। মিলারদের জন্য চাল সংগ্রহে ভাটা পড়ে। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে ১০ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা বরাদ্দ পাওয়ার অর্ধেকও আমদানি করেননি। সরকার নির্ধারিত সময়ে চাল আমদানি না হওয়ায় সময়ও বাড়িয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২১ আগস্ট পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খোলার সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিলেও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এতেও পড়েছে ভাটা। এসব কারণে বাজারে চালের ঘাটতি তৈরির শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা। আর সরকারের এ দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এরই মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজির ছক কষছেন।

দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ- এমনটাই বলা হয়। অথচ হুট করে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে গেছে। গতকাল ‘গরিবের চাল’ বলে খ্যাত মোটা চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকায়। আর একটু ভালো মানের অর্থাৎ মধ্যম মানের চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৫ টাকা পর্যন্ত। আড়তদাররা বলছেন, মোটা চালের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। যার কারণে মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া মোটা চাল আমদানি কম হওয়ার কারণেও বাজারে মোটা চালের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বমুখী সময়ে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ পড়বেন চরম সংকটে। এমনিতেই সংসার চালাতে অনেকে খরচের খাতা কাটছাঁট করছেন। এবার চালের দাম বাড়লে আরো বেশি সমস্যায় পড়বেন তারা। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, চালের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নি¤œ আয়ের মানুষ। তাদের বিভিন্ন খরচে কাটছাঁট করতে হয়। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে চালের দাম বাড়লে তাদের কষ্ট আরো বাড়বে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বাড়লে বেশি সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। তাই সরকারের উচিত চালের দাম দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা।

অগাস্ট ০৫,২০২২ at ১৩:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/রারি