কাঁচা মরিচের কেজি ২৫০ টাকা!

রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দামে লাগাম নেই। পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ২-৫ ও এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচে ৩০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে একই মরিচ প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকায় কিনতে দেখা গেছে। এক দিনের ব্যবধানে স্থলবন্দর হিলিতে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

দুদিন আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকায়। হঠাৎ করে কারণ ছাড়াই কাঁচা মরিচ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কয়েক কিলোমিটার ব্যবধানের বাজারগুলোতে ২০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হতেও দেখা গেছে।

রাজধানী ঢাকার বাজারের মরিচ বিক্রেতাদের দাবি, দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। মরিচসহ সবজি উৎপাদনকারী অনেক নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন সবজিগাছের ক্ষতি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় মরিচের সরবরাহ কম থাকায় বাজারে মরিচে দাম ঊর্ধ্বমুখী। অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজার, হাতিরপুল, মহাখালী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়। মোহাম্মদপুরের সবজি ব্যবসায়ী আবুল বাসার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন দিন আগে পাঁচ কেজির পাল্লা কিনেছিলাম ৮৫০ টাকা দিয়ে। সকালে মরিচ কিনতে হয়েছে প্রতিপাল্লা ৯৫০ টাকায়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই মরিচের পাল্লা বিক্রি হতে দেখা গেছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।’

হাতিরপুলের সবজি ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে মরিচের দাম বাড়ার ফলে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে। প্রতিপাল্লা মরিচ কেনা পড়ে ৯০০ টাকার ওপর। খুচরাপর্যায়ে আসতে আসতে খরচসহ প্রতি কেজি মরিচের দাম পড়ে ১৯৫ টাকা। ক্রেতাপর্যায়ে যেতে যেতে আরও ৫-১০ টাকা বাড়ে। সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায় বা তার একটু বেশিতে।’

মরিচ ছাড়াও কাঁচা বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের সবজির কেজি অন্তত ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। কাঁকরোল, উস্তা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বরবটির মতো সবজি ক্রেতাদের ৫০-৭০ টাকা কেজিতে কিনতে দেখা গেছে। এসব সবজি গত সপ্তাহেও কেজিতে ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে ছিল বলে জানিয়েছেন বাজারে আসা ক্রেতারা।

গত সপ্তাহে কাঁকরোল ৫০, উস্তা ৭০-৭৫, বরবটি ৬০, কাঁচকলা ৩০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, গাজর ১৪০, শালগম ১২০, লাউ প্রতিটি ৫০-৬০, বরবটি ৭০, পটোল ৬০, আলু ২৮-৩০, পেঁয়াজ ৪৫ ও টমেটো ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

আরো পড়ুন :
নিহত ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের দাফন সম্পন্ন
পাঁচবিবিতে র‌্যাবের অভিযানে ইয়াবা ব্যাবসায়ী আটক

বাজার করতে আসা গৃহিণী আয়েশা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের আর কিছু জিজ্ঞেস করার বাকি আছে? আপনারা লিখেও কি পরিবর্তন আনতে পেরেছেন? আমাদের স্বপ্নের দেশে এখন প্রতিদিন দুঃস্বপ্ন হানা দেয়। যে দ্রব্যের দাম একবার বাড়ে তা আর কমার ইতিহাস দেখিনি। এটাই আমাদের নিয়তি।’

৫০ কেজির বস্তার সব ধরনের চালে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। খুচরাপর্যায়ে এসব চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭২ টাকায়, বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩, নাজিরশাইল ৭৪ থেকে ৮২ এবং পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

সরকারের চাল আমদানির পরও হঠাৎ চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কারওয়ান বাজারের মতলব ট্রেডার্সের কর্ণধার আবু রায়হান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন সবকিছু মিলারদের হাতে। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা চালের মূল্যবৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন না। কিন্তু চালের বাজারদর কমলে আমাদের লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করতে হয়। শুল্ক কমিয়ে মাল আমদানি করার সঙ্গে ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে ৬৫ টাকার চালে মিলাররা আরও ৩ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী দুয়েক দিনে বস্তাপ্রতি আরও ৫০-৭০ টাকা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

হাতিরপুলের মুদিদোকানি জাহিদ হাসান বলেন, ‘দিন দিন চালের দাম বাড়ছে। নতুন চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা।’

এদিকে মাংসের বাজারে খবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০-১৫ এবং খাসি ও ছাগলের মাংস কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহের ১৫০ টাকার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকায়। আর ৯৫০ টাকার খাসি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১ হাজার টাকায়। মাংসের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বাচ্চা উৎপাদন খরচ বাড়ায় মুরগির দাম বেড়েছে।

অগাস্ট ০৫,২০২২ at ১৩:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেরু/রারি