অভয়নগরে শিক্ষকের লাম্পট্যের ভিডিও ফাঁস : অভিভাবকমহল ক্ষুব্ধ

যশোরের অভয়নগরে মহিলা অভিভাবক সদস্যের সাথে সুন্দলী ইউনিয়নের রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিরামণ মন্ডলের অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেঁসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি জানিয়েছেন। এদিকে এলাকায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মাঝে অভয়নগর উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষককে এক মাসের মেডিকেল ছুটি দিয়েছেন। ছুটি নেয়ার পর থেকে ওই শিক্ষক মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে গা- ঢাকা দিয়েছেন।

বিষয়টি ঘটনার পরদিনই বিদ্যালয়ের সভাপতি মুঠোফোনে শিক্ষা অফিসারকে জানালেও অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা না হয়নি। উপরোন্ত গণমাধ্যমের কাছে শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম দাবি করেছেন তিনি ঘটনাটি জানেন না। বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার পর পরই বিশেষভাবে ম্যানেজ হয়ে ওই লম্পট শিক্ষককে এক মাসের মেডিকেল ছুটি দেয়া হয়েছে। শিক্ষক হীরামণ মন্ডল সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটি গ্রামের বিকাশ চন্দ্র মন্ডলের ছেলে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।

অভিযোগে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক হিরামণ মন্ডল রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ওই বিদ্যালয়ের জনৈক মহিলা অভিভাবক সদস্যের একটি অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। চাকরির সুবাদে ওই মহিলা অভিভাবক সদস্যের স্বামী বাইরে থাকার সুযোগ নিয়ে লম্পট শিক্ষক হিরামণ তাকে ফুঁসলিয়ে তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ঘটনা সম্পের্কে জানতে চাইলে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র মল্লিক বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি, তবে এই ঘটনা আমার প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারিতে ঘটেনি, প্রতিষ্ঠান চলাকালিনও ঘটেনি এবং আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সাথেও ঘটেনি। ঘটনাটি ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এখানে আমার বলার কিছু নেই। এক প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক হিরামণ মন্ডল বলেন, ঘটনার পর থেকে স্থানীয় অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করে আসছেন। ওই শিক্ষককে অপসারণ করা না হলে তারা তাদের সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে পড়াবেননা বলেও জানিয়েছেন। ফলে নিরূপায় হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি ওই শিক্ষককে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছি এবং মেডিকেল ছুটি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

আরো পড়ুন :
সাংসদ শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
নিয়মিত মামলার নির্দেশ : চৌগাছায় ভো-দৌড় বালু উত্তোলনকারীর, ৫ সহায়তাকারীর ৭ দিনের জেল

এ ব্যাপারে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মিন্টু কুমার রায় বলেন, প্রাথমিক ভাবে আমি ঘটনা শুনেছি এবং পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষক হিরামণ মন্ডলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। তাদের দাবি শিক্ষক হিরামণ মন্ডল যেন স্কুলে না আসে, ওই শিক্ষক স্কুলে আসলে অভিভাবকরা আর তাদের ছেলে-মেয়েদের পাঠাবেননা।

প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আমি শিক্ষক হীরামণকে এখন স্কুলে আসতে নিষেধ করেছি। দ্রূত বিষয়টি নিয়ে আমার কমিটির সদস্য ও শিক্ষদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। তবে গ্রামে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি না জানানো প্রসংগে কথা বললে তিনি বলেন, ঘটনার পরদিনই মৌখিকভাবে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আজ বৃহস্পতিবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

ঘটনা সম্পের্কে জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ করিম বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা এবং আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এমন একটি ঘটনা ঘটার পরই তাকে এক মাসের মেডিকেল ছুটি দেয়ার প্রসংঙ্গ টানলে এ শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, মেডিকেল ছুটি ভিন্ন বিষয়। এর সাথে ঘটনার কোন সংশ্লিষ্ঠতা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

ঘটনা সম্পের্কে জানতে চাইলে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হীরামণ মন্ডল বলেন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে যাই ঘটুকনা কেন আমি আমার সকল কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থী। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতিপূর্বেও শিক্ষক হিরামণ মন্ডলের বিভিন্ন লাম্পট্যের গল্প এলাকাবাসীর মুখে মুখে শোনা যায়।

অগাস্ট ০৩,২০২২ at ২০:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জাহো/রারি