নিয়মিত মামলার নির্দেশ : চৌগাছায় ভো-দৌড় বালু উত্তোলনকারীর, ৫ সহায়তাকারীর ৭ দিনের জেল

যশোরের চৌগাছায় বারবার সতর্ক করা, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে মুচলেকা নেয়া, ১৪৪ ধারা জারি এবং নিয়মিত মামলা করার পরও অবৈধভাবে সরকারি জমি থেকে বালু উত্তোলন এবং বালু উত্তোলন করে অন্যের বসতবাড়ির ক্ষতি করার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৫ বালু উত্তোলনে সহায়তাকারীকে ৭দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত দেখে মূল অভিযুক্ত জগদীশপুর গ্রামের আব্দুল্লহেল কাফি পিন্টু ঘটনাস্থল থেকে ভো-দৌড় দিয়ে ঘটনাস্থল থকে পালিয়ে যায়। পরে আদালত বালু বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি ডাম ট্রাক (যশোর-ড-১১-১১৬৮), ৭টি বালু তোলার বেলচা, ১টি কোদাল, ১টি কুড়াল, ২টি মানুষ বসার চৌকি এবং ১টি টিনশেড ঘর জব্দ করেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১০টার দিকে উপজেলার চৌগাছা (মুক্তদহ মোড়)- জগদীশপুর সড়কের পাশে জগদীশপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এই সাজা দেন আদালতের বিচারক ও চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস। এসময় তাঁর সাথে চৌগাছা থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের তরিকুল ইসলাম (৪১), সাহালম (৩৫), আজিম উদ্দিন (২৩), শাহাজাহান (৩৫) এবং যশোর সদর উপজেলার জগহাটি গ্রামের বাসিন্দা ও জব্দ ড্রাম ট্রাকটির চালক রুবেল হোসেন (৩০)। আদালত সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা (মুক্তদহ মোড়) থেকে জগদীশপুর পাকা সড়কের পাশে জগদীশপুর মৌজায় সরকারি খাস খতিয়ানের একখন্ড জমি রয়েছে। তার পাশ দিয়ে একটি সরকারি পায়েহাটার গ্রাম্য কাঁচা রাস্তা। জমিটির পাশে স্থানীয় কয়েকজনের বসতবাড়ি রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে জগদীশপুর গ্রামের আব্দুল্লহেল কাফি পিন্টু সরকারি ওই রাস্তা এবং জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলো। বালু তুলতে তুলতে ব্যক্তিগত জমিতে বসতবাড়ি করে থাকা ব্যক্তিদের পাকা বসতবাড়ি ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বারবার বলা সত্বেও বালু উত্তোলন বন্ধ করছিলেন না। পরে বসতবাড়ির মালিকরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবির দু’দুবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। তখনও মূল বালু উত্তোলনকারী কাফি পিন্টু পালিয়ে যায়। তখন শ্রমিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়। এতেও বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি পিন্টু।

পরে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডা. নূর হোসেনের নেতৃত্ব ওইস্থানে সংবাদ সম্মেলন করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি করা হয়। তাতেও বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে বসতবাড়ির মালিকরা যশোর আদালতে মামলা করলে ওইস্থানে ১৪৪ ধারা জারি করেন আদালত এবং চৌগাছা থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর পুলিশ আব্দুল্লাহেল কাফি পিন্টুকে চৌগাছা থানায় নিয়ে আসলে তিনি বালু তুলবেন না বলে মুচলেকা দেন। তবে এর কিছুদিন পর থেকেই আবারও বালু উত্তোলন শুরু করলে বসতবাড়ির মালিকরা আবারও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন।

তখনও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পিন্টুকে পাওয়া যায়নি। পরে তার বিরুদ্ধে গত ২৭মার্চ চৌগাছা থানায় ওই ইউনয়িনের ভূমিসহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে নিয়মিত মামলা করেন। তবুও অদৃশ্য কারনে পুলিশ পিন্টুকে গ্রেপ্তার বা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাসকে বিষয়টিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে গত ২ আগস্ট জগদীশপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করেন এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে বালু উত্তোলন করবেন না মর্মে মুচলেকা নেন। এরপরও তাঁরা বালু উত্তোলন বন্ধ না করায় বৃহস্পতিবার সকালে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস। এসময় তাঁর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে আদালত পরিচালনাকারী চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বস বলেন, গত ২ আগস্টও তাঁদের সতর্ক করা হয়েছিলো। এর আগেও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। তবুও তাঁরা অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি। তিনি বলেন, মূল অভিযুক্ত আব্দুল্লাহেল কাফি পিন্টু পালিয়ে যান। তাঁকে অনেক খুঁজাখুজি করে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫ ধারা লঙ্ঘনে এই সাজা দেয়া হয়েছে।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বারবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সতর্ক করা হলেও তাঁরা অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করেননি। গত বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ২৭ মার্চ পিন্টুর বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় নিয়মিত মামলা করেন ওই ইউনিয়নের নায়েব (ভূমিসহকারী কর্মকর্তা)। এরপরও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন বৃহস্পতিবারও আদালত পরিচালনার সময় মূল অভিযুক্ত কাফি পিন্টু পালিয়ে যায়। তাঁকে অনেক খুঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি। এজন্য তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অগাস্ট ০৪,২০২২ at ১৯:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মই/রারি