২য় শিফটে বাজিমাত, ৬ষ্ঠ শিফটেই দুর্দশা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ ভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাতটি শিফটে গড়ে ১৪ শতাংশের মতো চান্স পাওয়ার কথা সেখানে ৬ষ্ঠ শিফটে মাত্র দেড় শতাংশ (১.৫%) শিক্ষার্থী জায়গা করে নিতে পেরেছেন। প্রতি শিফটে প্রায় দশ থেকে এগারো হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে ৬ষ্ঠ শিফটে চান্সপ্রাপ্তিদের তালিকায় জায়গা করে নেয় মাত্র সাত (৭) জন ভর্তি-ইচ্ছুক।

এতে দেখা যায় শিফট বৈষম্য তার মাত্রা ছাড়িয়েছে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় মেধার অবমূল্যায়ণ হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার্থীরা।

এছাড়াও ২য় শিফটে প্রায় একই পরিমান শিক্ষার্থী থেকে ১৪৫ জন চান্স পায়, যা মোট চান্সপ্রাপ্তদের ৩১ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া ১ম, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৭ম শিফটে যথাক্রমে ৯২ জন (১৯.৭%), ৩৮ জন (৮.২%), ৩০ জন (৬.৪%), ১১৮ জন (২৫.৩%) ও ৩৬ জন (৭.৭%)।

জানা যায়, শুধুমাত্র ‘এ’ ইউনিটে’ই ৪১ হাজার ৫০ জন ছাত্র ও ২০ হাজার ৩৫১ জন ছাত্রী ভর্তিচ্ছু অংশগ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। উক্ত ইউনিটে ছেলে ভর্তিচ্ছুর সর্বোচ্চ নম্বর ৮৭.৪০ যেখানে মেয়ে ভর্তিচ্ছুর সর্বোচ্চ নম্বর ৮৪.৪০।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান উৎপাদন করা। যার প্রধান শর্ত মেধাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সকল কিছুর উর্ধ্বে মেধার গুরুত্ব স্থান পাবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় কোটার নামে মেধাকে অবদমন করা হচ্ছে।’

আরো পড়ুন :
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করলেন এমপি প্রিন্স
বীরগঞ্জে শুভসংঘের আয়োজনে ঢেপানদীতে দেশীয় প্রজাতির পোনা অবমুক্তকরণ

জানা যায়, ‘এ’ ইউনিটে পাসের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত আবেদন করেছিলেন ৭৬ হাজার ৩০৯ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উপস্থিতির হার ছিলো প্রায় ৮০.৬৪ শতাংশ। পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ফেল করেছেন। সর্বোমোট ৩৩ হাজার ৯২০ জনের মধ্যে ছেলে ২২ হাজার ৯২৭ ও মেয়ে ১০ হাজার ৯৯৩ জন পাস করতে পেরেছেন।

এর আগে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদ ভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের প্রথম শিফট থেকে মাত্র ৩৪ জন জন চান্স পেয়েছে যা উক্ত ইউনিটের মোট চান্সপ্রাপ্তদের মাত্র ৮.৮১ শতাংশ ও পঞ্চম বা শেষ শিফট থেকে চান্স পেয়েছে ১৭৫ জন যা উক্ত ইউনিটে মোট চান্সপ্রাপ্তির ৪৫.৩৪ শতাংশ।

এদিকে গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় ‘একক প্রশ্নপত্রে মূল্যায়ন চাই’ প্ল্যাকার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশে অনশন শুরু করেন শোভন রায় নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। তিনি এবার ‘বি’ ইউনিটে দ্বিতীয় ও ‘সি’ ইউনিটে চতুর্থ শিফটে পরীক্ষা দিয়েছেন। ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশর পর শোভন অকৃতকার্য হয়েছে শুনে এই অনশনের সিদ্ধান্ত নেয়।

শোভন বলেন, ‘জাবিতে ভর্তি পরীক্ষার ‘শিফট’ পদ্ধতিতে প্রতিবছর একধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কোন শিফটের পরীক্ষা সবচেয়ে সহজ হয় আবার কোন শিফটে পরীক্ষা একদম কঠিন হয়। এতে কোনো শিফট থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী চান্স পায় আবার কোনো শিফট থেকে কম চান্স পায়। এতে কোনভাবেই শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়না। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিফট ভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হোক।’

উল্লেখ্য ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নূরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এবার ইউনিট সংখ্যা কমিয়েছি, পরবর্তীতে শিফট পদ্ধতি নিয়ে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।

অগাস্ট ০৪,২০২২ at ১৪:৪২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নাউ/রারি