গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু আজ, প্রস্তুত জবি

গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার শুরু হচ্ছে শনিবার। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ‘এ’ ইউনিটের বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে পরীক্ষা। এরই মাঝে পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে গুচ্ছ ভর্তি কমিটি।

প্রথম দিন ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এক লাখ ৬১ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মাঝে শুধু মাত্র ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন ৬৪ হাজার শিক্ষার্থী। যা মোট ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজধানীর মোট ৮ টি কেন্দ্রে এসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিবে। এ পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি পরীক্ষায় গ্রহণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা যাতে সহজেই নিজেদের আসন খুঁজে পায় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল ব্যানারে রোল নম্বর, কেন্দ্র এবং ভবন নির্দেশক বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেয়ার জন্য সব ভবনের প্রবেশমুখে বিএনসিসি, রোভার স্কাউটসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। তারা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবেন বলে জানানো হয়েছে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যেসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ধারণ করেছিলো তাদের আসন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ মোট ৮টি কেন্দ্রে সাজানো হয়েছে। এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকায় গুচ্ছের কেন্দ্র হিসেবে থাকছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, নটরডেম কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ভবন-১ (গেট -১) ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ভবন-২ (গেট-২) গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স, ইডেন মহিলা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০২৫ জন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০০ জন, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ৩০০০ জন, গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্সে ২০০০, ইডেন মহিলা কলেজে ৬০০০, নটরডেম কলেজে ৩২০০, ভিকারুন্নেছা নূন স্কুল এন্ড কলেজে ভবন-১ এ ২৭০০, ভবন-২ এ ২২২০ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬৩১৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ৩০ জুলাই মোট ৮টি কেন্দ্রে ৬৪৪৫৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিবে।

এদিকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে আসতে পারে সেজন্য যানজট নিরসনে ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রতিটি কেন্দ্রে ওএমআর ও অন্যান্য কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগের ইউনিট ‘এ’ ভর্তি কমিটির সমন্বয়কারী ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনএনসিসি, রোভার স্কাউটস গ্রুপ থাকবে। পাশাপাশি কেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তা বজায়ে রাখতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও কাজ করবে। ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের দুটি ভবনে হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে আলাদা করে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পাঠানো হয়েছে।

‘এ’ ইউনিট ভর্তি কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদে ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার জানান, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিলগালা করে আমাদের এখানে পাঠানো হবে। পরীক্ষার দিন নিরাপত্তার সঙ্গে প্রশ্ন কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল থাকবে।

ভর্তি পরীক্ষার দিন সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএমপির কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছি, এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ডিসি ওয়ারি, ডিসি লালবাগ, পুলিশের ডিসি ওয়ারি, ডিসি লালবাগ, এনএসআই সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হয়। আর ট্রাফিকের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে আসা যাওয়া করতে পারে।’

নিউজবাংলাকে ড. মোস্তফা কামাল আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি গেইট এবং পোগোজের একটি গেইট সহ মোট চারটি গেইট দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ এবং বের হতে পারবেন এবং এসব গেটে পুলিশ পাহারায় থাকবে। পরীক্ষার উপকরণ ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস যেমন ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, মোবাইল বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস, এটিএম কার্ড নিয়ে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেনা বলেও জানিয়েছেন প্রক্টর।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস এরই মধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইতিমধ্যেই পরীক্ষার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওএমআরও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষা সম্পন্ন হবে আশা করছি।

শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৎপর থাকবে এবং কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে যেন সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে বলেও জানিয়েছেন উপাচার্য।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটে পরীক্ষার জন্য মোট আবেদন পড়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫২৪টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটে। এই ইউনিটে এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি আবেদন করেছেন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটে আবেদন পড়েছে সবচেয়ে কম। এই ইউনিটে আবেদন করেছে ৪২ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। আর মানবিকের জন্য ‘খ’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ৯০ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। ৩০ জুলাই ‘এ’ ইউনিট, ১৩ আগস্ট ‘বি’ ইউনিট ও এবং ২০ আগস্ট ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনাবলী :

# অনলাইন প্রদত্ত প্রবেশপত্র অবশ্যই এ সাইজের অফসেট কাগজে রঙিন প্রিন্ট করতে হবে। প্রবেশপত্রে প্রার্থীর রঙিন ছবি এবং তথ্যসমূহ স্পষ্টভাবে মুদ্রিত থাকতে হবে।অনলাইনে আবেদন করার সময় আপলোডকৃত ছবিটিই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

# পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই তার জন্য নির্ধারিত কক্ষের নির্দিষ্ট আসনে পরীক্ষা দিতে হবে।

# প্রবেশপত্র, এটেন্ডেন্স শিট ও ও এম আর শিট এ পরীক্ষার্থীর অভিন্ন স্বাক্ষর থাকতে হবে।

# পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার ন্যূনতম ১(এক) ঘন্টা পূর্বে প্রার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার পরে কোনো প্রার্থীকে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

# উত্তরপত্রে কালো কালির বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে হবে। পেন্সিলের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

# ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রার্থীকে প্রবেশপত্র এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিষ্ট্রেশন কার্ড অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে। পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ওএমআর শিট ও প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করবেন। প্রবেশপত্রটি পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।

# ক্যালকুলেটরসহ অন্য যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

জুলাই ৩০,২০২২ at ১০:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মসস/রারি