রাণীশংকৈলে ইউপি নির্বাচনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে শিশু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থামাতে গিয়ে পুলিশের ছোড়া গুলিতে শিশু নিহতের ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল গণনা শেষে সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীদের পক্ষের উত্তেজনার জেরে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ৯ মাস বয়সী সুরাইয়া আক্তার নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের টেকিয়া মহেশপুর ভি এফ নিম্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।নিহত শিশু উপজেলার মীরডাঙ্গী দিঘির পাড় গ্রামের বাদশা আলমের তৃতীয় সন্তান।

এ বিষয় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওই রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ও ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন। পরদিন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আবারো নিহতের বাড়িতে এসে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং এঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান। এ সময় রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্নাসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

নিহত শিশুটির চাচা মাসুম পারভেজ বলেন, ‘আমার ভাবি ওদিন ভোট কেন্দ্রে ভোট শেষে পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান এ সময় ছোট মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে ছিল। মেয়েটি তার কোলে ছিল। সেখানেই জনগণ ও পুলিশের প্রচন্ড ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে ভাজতির মৃত্যু হয়।নিহত শিশুটির মা মিনারা বেগম বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভোটের ফলাফল শুনার জন্য ভোট কেন্দ্রের বাড়ির পাশের গলিতে দাড়াই ছিলাম। একটু পর পুলিশের গুলি আমার মেয়ের মাথায় এসে লাগে। আমার মেয়ের মাথার খুলি উড়িয়ে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায়, আমি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রের ফলাফল শেষে যখন তারা কেন্দ্র ত্যাগ করছিলো তখন পরাজিত মেম্বার প্রার্থীদের থেকে আমাদের মোবাইল টিম ও সদর সার্কেলের উপর অ্যাটাক করে। কিছু সময় অতিক্রম হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো অস্বাভাবিক হয়ে যায়। আমাদের সদস্যদের উপর তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠি চার্জ করে। এতে পরিবেশ আরো বেশী খারাপ হওয়ায় জান-মালের রক্ষার্থে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। আমাদের দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনায় ৯ মাস বয়সী শিশু মারা যায়। আসলে কীভাবে মারা গেল- এটি এখনো জানা যায়নি। এটির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল ২৮ জুলাই নিহত শিশুটির মরদেহটি পোষ্ট মোর্টেমের পর দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আসলে দুখঃজনক। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন। আর শোক সন্তপ্ত পরিবারকে আমরা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।

জুলাই ২৯,২০২২ at ২০:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আহো/রারি