কুবিতে নামে মাত্র গবেষণা সম্প্রসারণ দপ্তর, মান বৃদ্ধির দাবী

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গবেষণা দপ্তরে পর্যাপ্ত লোকবল, অবকাঠামোগত সংকট এবং পরিকল্পিত অফিস স্পেস না থাকায় বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন দপ্তরটির পরিকল্পিত উন্নয়ন না করা এবং কম গুরুত্ব প্রদানের কারনে এমন ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের সাথে সমন্বয় রক্ষার মাধ্যমে সমতা অর্জন, জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং আধুনিক জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি নতুন জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। তবে বস্তত জ্ঞান চর্চার মৌলিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী গবেষণা, গবেষণা বরাদ্দ, ছাত্রশিক্ষকদের মাঝে গবেষণামুখী আগ্রহ, উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী এবং এসম্পর্কিত দপ্তর বরাবরই অবহেলিত হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রথম গবেষণা সম্প্রসারণ দপ্তরটি প্রতিষ্ঠা হয়। এতে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মেদ মিজানুর রহমানকে ডিরেক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার নুসরাত আরমিনকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে স্থানান্তরিত করে দপ্তরটিতে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহম্মদ আহসান উল্লাহকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডিরেক্টরের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুন:
ফুলবাড়ীতে বন্যায় স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে পাট চাষীদের
বাবার খুনের বিচার পেতে আইনজীবী হন ছেলে

দপ্তরি ঘুরে দেখা যায়, একটি কক্ষেই দপ্তরের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এমনকি সেই কক্ষে অন্যান্য দপ্তরের আসবাবপত্র থাকায় শুধুমাত্র একটি টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার, প্রিন্টার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সহযোগী লোকবল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর বৃদ্ধির সাথে কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলেও সার্বিক কার্যক্রম সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় দপ্তরটিকে। তাই গবেষণার মান বৃদ্ধিতে গবেষণা সম্প্রসারণ দপ্তরকে ঢেলে সাজানো, লোকবল নিয়োগ, অফিস পরিসর বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, গবেষণা ভাতা বৃদ্ধি, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপের আয়োজন, ভালো প্রকাশনার উপর প্রণোদনা প্রদান এবং গবেষণার মান বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সেকশন অফিসার নুসরাত আরমিন বলেন, আমার নিয়োগ রেজিস্ট্রার দপ্তরে। এখানে দায়িত্ব দেয়া হলেও কোন সহযোগী লোকবল নেই। সকল কার্যক্রম আমাকেই সামাল দিতে হয়। এতে একদিকে যেমন বিড়ম্বনা তৈরী হয় অন্যদিকে সকল কাজে সময়ক্ষেপণ হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, এবং শিক্ষকগণ গবেষণা সংক্রান্ত কাজে দপ্তরে আসতে হয়। উনাদের বসতে দেবার মত সেই স্পেস নেই। বিভিন্ন সময়ে সহযোগীতার প্রয়োজন হলে অন্য দপ্তরের পিয়নদের বললে তারা নিজের দপ্তরের কাজের চাপে সময় দিতে পারে না কিংবা ভিন্ন দপ্তর হওয়ায় গুরুত্ব দেয়না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মেদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ দপ্তরটির অবস্থা খুবই করুণ। সেখানে লোকবল এবং পর্যাপ্ত স্পেস নেই। যেখানে গবেষণাই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক কার্যক্রম হয়ে থাকে। সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এ বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহন করছে বলে জানি। তবে দ্রুত সেটির বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে এসকল বিষয়ে জানিয়েছিলাম। আমাদের লোকবল নাই। ইতোপূর্বে এসকল সমস্যা সমাধান হয়নি। তবে বর্তমান উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। খুব শীগ্রই সকল সমস্যা সমাধান করে গবেষণা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রস্তাব যাচাই বাছাই ও মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক। গবেষণার মান নিশ্চিত এবং পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। সর্বপরি আমরা কতগুলো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সমস্যাগুলো আর থাকবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আব্দুল মঈন বলেন, গবেষণা সম্প্রসারণ দপ্তরকে ঢেলে সাজাতে আমরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। খুব শীগ্রই আপনারা এটির বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা গবেষণার মান বৃদ্ধিতে কোলাবরেটিভ রিসার্চের কালচার তৈরী করছি। যেখানে বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যারা ভালো স্কলার এবং অভিজ্ঞ গবেষক তাদেরকে নির্দিষ্ট পিরিয়ডের জন্য নিয়ে আসব। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষকদের প্রমোশনের জন্য ভালো জার্নালে পেপার পাবলিকেশনকে বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে। সর্বপরি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সম্পর্কিত কার্যক্রম এবং গবেষনামুখী পরিবেশ তৈরীতে আমরা বদ্ধপরিকর।

জুলাই ২৬,২০২২ at ১৩:০৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/চৌমা/এসএম