ড.লামিয়া’র অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইমেজিং প্রজেক্টে একদল যবিপ্রবিয়ান

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এখন আর রূপকথা নয়। জেমস ওয়েব এখন গভীর আবেগের নাম, যেখানে ইতোমধ্যে আমরা সাক্ষী হয়েছি এক অনন্য ইতিহাসের। জ্যোতির্বিজ্ঞানের শুরু সেই আদিকাল থেকেই। যখন মানুষ সূর্যোদয় দেখত, অপেক্ষায় থাকতো রাতের অনিশ্চিত অন্ধকার কাটিয়ে কখন সূর্য উঠবে ভোর হবে কখন? ফেলে আসা সময়ের মতো আজও আকাশের প্রতি রয়েছে মানুষের এক অদম্য আকর্ষণ।

সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধারণকৃত সাড়ে ১৩ হাজার কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের বহুদূরের গ্যালাক্সিগুলো দেখতে যেমন ছিল তার সবচেয়ে স্পষ্ট ও রঙিন ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এই ছবি মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দেবে বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। সবচেয়ে গর্বের বিষয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. লামিয়া আশরাফ মওলা। তিনি নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দলের একজন গর্বিত সদস্য। জেডব্লিউএসটি’র কানাডিয়ান দলের সঙ্গে ২০২০ সালে একজন ফেলো হিসেবে সেখানকার ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে কাজ করেন তিনি।

একজন বিজ্ঞানী হিসেবে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের ওপর আরও জোর দেওয়া উচিত। ‘আমরা মুখস্থ বিদ্যার ওপর বেশি জোর দেই, যেটি খুবই বিপদজনক। আমাদেরকে এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত গবেষণার ওপর জোর দেওয়া এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত অগ্রগামী ভূমিকা নেওয়া।

নিজের গবেষণার পাশাপাশি বাংলাদেশি তরুণ-প্রজন্মের জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলতে বেশকিছু অনলাইন ওয়েবিনার করেছেন এবং সুযোগ করে দিয়েছেন নিজের প্রজেক্টে। যেখানে তিনি কাজ করছেন গুগল পিক্সেলের অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির পাওয়ারফুল মেশিন লার্নিং সফটওয়্যার নিয়ে, কিভাবে মোশন ব্লার, শেক ব্লার, হাই ইমেজ নয়েজ অপেক্ষাকৃত কমিয়ে হাই এক্সপোজারে অটোমেটিক্যালি প্রসেসড ইমেজে তৈরী করা যায় তা নিয়ে টরোন্টো ইউনিভার্সিটির সাথে কাজ করছেন।

এই প্রজেক্টের ‘Raw Data’ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল মুজাহিদ আফ্রিদি ও নাসরিন আফরোজ এবং সিএসই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাগর সরকার। তাঁরা যবিপ্রবি’র ‘জামাল নজরুল ইসলাম অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাব’র সক্রিয় সদস্য।

আরো পড়ুন :
ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য দুই রাকাত নামাজ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত
শশুর বাড়ি বেড়াতে এসে জামাইয়ের আত্মহত্যা

ক্লাবের সভাপতি আল মুজাহিদ আফ্রিদি বলেন, লো বাজেটে বিগিনার লেভেলের টেলিস্কোপের বিকল্প হিসাবে গুগল পিক্সেলের অ্যালগরিদম খুবই ইফেক্টিভ। হয়তো একসময় কনভুশনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক ইমেজকে আরো এ্যানালাইজ করে প্রসেসিং সিস্টেমকে অন্যতম পর্যায়ে পৌঁছে দিবে। কৃতজ্ঞতা জানাই ড. লামিয়া ম্যামকে, এ প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ প্রদানের জন্য।

ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি সাগর সরকার বলেন, লামিয়া ম্যামের সহযোগিতা ও নির্দেশনা অনুযায়ী কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফি সাথে পরিচয়টা আমার।গুগল পিক্সেল ফোনের অ্যাস্টোফটোগ্রাফি মোডে তোলা ফটোগুলো নিয়ে কনভুশনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফটো কোয়ালিটি  এনহ্যান্স করা ছিল প্রধান কাজ । ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও বেশি কিছু কাজের প্রত্যাশা।অসংখ্য ধন্যবাদ ম্যামকে এভাবে সুযোগ প্রদানের জন্য।

এ বিষয়ে জামাল নজরুল ইসলাম অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাবের উপদেষ্টা মো. ফারুক হোসেন বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে জ্যোর্তিবিজ্ঞানে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।স্বপ্ন আমরাও দেখি কিন্তু বাস্তবতায় সংকীর্ণ, আমাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য ড. লামিয়া আশরাফ মওলাকে ধন্যবাদ জানাই।

উল্লেখ্য যে, জ্যোতির্বিজ্ঞানকে জানতে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানকে জানার আগ্রহ প্রগাঢ় করার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করতে একদল উদ্যমী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ২০২০ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠন করা করা হয় জামাল নজরুল ইসলাম অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাব।

জুলাই ১৮,২০২২ at ২০:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ফহা/রারি