নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটন স্পট গুলোতেও ভ্রমণ পিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়

বান্দরবান জেলাধীন সর্ব দক্ষিণ পূর্বে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলাটি বান্দরবান শহর থেকে ১২০ কি:মি: এবং কক্সবাজার থেকে মাত্র ৩৫ কি:মি: দূরে এ উপবন লেকটি অবস্থিত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যের লীলাভূমি নাইক্ষ্যংছড়ি। উঁচুনিচু পথ, পাহাড়ের শরীর জুড়ে ঘন সবুজের সমারোহ যেন এঁকেবেঁকে চলে গেছে গভীর থেকে আরো গভীরে।নাইক্ষ্যংছড়ি এর রূপের জাদুর যেন শেষ নেই।প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে এখানে মেলে ধরেছে তার সৌন্দর্যের মায়াজাল। এই সবুজ পাহাড়ের বুক চিঁড়ে লুকিয়ে আছে স্বচ্ছ জলের কৃত্রিম লেক। চারিপাশে সবুজ বনানী মেলেছে সবুজ ডানা। তার মাঝে স্বচ্ছ জলে মূখ লুকিয়েছে নীল আকাশ।

সবুজ আর নীলের মাঝে লেকের বুক চিঁড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝুলন্ত সেতুটি। অসাধারণ সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না।পাখির কলরবে মুখরিত চারপাশ।

এখন এ উপবন পর্যটন লেকটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সবুজ বেষ্টিত নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাণ কেন্দ্রে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ঘেঁষে প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ কার্পোটিং সড়ক যুক্ত প্রাকৃতির অপরূপ শোভায়শোভিত উপবন পর্যটন লেকটি অবস্থিত। এ লেকের পানি ব্যবহার করছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার স্থানীয় বাসিন্দা। এই লেকে প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত সেতু। সাধারণত নাইক্ষ্যংছড়িতে এসে এই ঝুলন্ত সেতুটি না দেখে কেউ ফেরত যায় না।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর উপজেলার ডাকবাংলোর গা ঘেঁষে উঁচা নিচু পাহাড়ের বুক চিঁড়ে উপবন পর্যটন লেকের দুই প্রান্তের এই ঝুলন্ত ব্রিজটি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্পট।ঈদুল আযহার একদিন পর থেকে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক, সোনাইছড়ির শৈল চূড়া দূর্বিন স্পট ও ঘুমধুমের কুমির প্রজ্জন কেন্দ্রটি। এখানে ঢাকা,চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যান্তঅঞ্চলের ভ্রমণ পিপাসুরা পরিবারপরিজন নিয়ে ভীড় জমিয়েছে এসব দৃষ্টিনন্দন স্পট গুলোতে।
১৫ জুলাই ছুটি দিনে শুক্রবার সকালে

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের এই ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাহাড়ী কন্যা ফুল কুমারীর নাইক্ষ্যংছড়ির ঝুলন্ত ব্রিজ,সোনাইছড়ির শৈল চূড়া দূর্বিন স্পট আর ঘুমধুমের কুমির প্রজ্জন ফার্মে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটকের পদচারণা মূখরিত চিত্রের দেখা মিলে। নাইক্ষ্যংছড়িতে এসব স্পট গুলোর দৃশ্য অবলোকনের পর অনেকে রেষ্ট হাউজে রাত যাপনও করছে নিজেরদের সুবিধামত।  তা ছাড়া ঘুমধুমের কুমির প্রজনন কেন্দ্র ও শৈল চূড়া দূর্বিন পর্যটনেও ভিড় জমছে ভ্রমণ পিপাসুদের।

আরো পড়ুন :
তরুণ প্রজন্মের অহংকার ও অনুপ্রেরণা – মাহমুদ হাসান
বোনের গর্ভেই বাবার সন্তান!

রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক এহেসানুল হক জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির উপবন লেকে মাছ ধরার জন্য বড়শি নিয়ে খুব শখের বসে বিনোদনের লক্ষে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছি। এর আগেও আসা হয়েছে একবার। আগের চেয়ে লেকের উপর ঝুলন্ত ব্রিজটি সংস্কারসহ বিভিন্ন বসার স্পট ও শিশুদের কিডস কর্ণার করাতে বিনোদনের জন্য খুবই সুন্দর আকর্ষন কেড়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের।এর মধ্যে পর্যটকদের আর্কষনের অন্যতম উপকরন হল দীর্ঘ লেকটির উপর দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুটি । ছোট ছোট টং ঘর, আর উচুঁ-নিচু পিচঢালা পথ। বিশেষ করে রাতে পাহাড়ের চূড়ায় থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি দেখতে খুবই দারুন।

সাবেক নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফাইল আহমদ বলেন, দর্শণীয় স্থান গুলোর আধুনিকায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল।

বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির বিশেষ অর্থায়নে উপবন পর্যটন লেকের উন্নয়ন শুরু হয়েছে । এরই অংশ হিসাবে পর্যটন মন্ত্রী,পার্বত্যমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক এ লেক পরিদর্শন করেছেন একাধিকবার।এখানে একটি কথা না বল্লে লেকটির ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায় সেটি হলো লেক সৃষ্টিকারী ও উদ্যোক্তা হিসেবে দাবীদার হলেন নাইক্ষ্যংছড়ি সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মতিউর রহমান। লেকের আধুনিকায়ন রূপ দিতে পর্যাক্রমে এ লেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছেছিলেন সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা আসলাম হাবীব,শামীম সোহেল, এসএম শাহেদুল ইসলাম, সাদিয়া আফরিন কচি ও বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস।

তাছাড়া সোনাইছড়ি-ঘুমধুম কার্পেটিং সড়কটি নির্মাণের ফলে পর্যটকের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর উপজেলা থেকে ৫কি: মি: দূরত্বে ব্যাক্তি মালিকানাধীন গড়ে উঠেছে পর্যটন স্পট “শৈল চূড়া দূর্বিন” নামক আরেকটি পর্যটন স্পট। সেখানেও ভ্রমণ পিপাসুদের উপচে পড়ার ভীড় জমে থাকে। যা উপবন পর্যটন লেকের চেয়েও কম নয়।

দূর্বিন স্পট থেকে ৪০ কি: মি: দুরত্বে ঘুমধুমের কুমির প্রজনন কেন্দ্র :
উপজেলার দুর্গম ঘুমধুম ইউনিয়নের পাহাড়ে ২৫ একর ভূমিতে ২০১০ সালের শেষের দিকে মালয়েশিয়া থেকে অর্ধ শতাধিক লোনা পানির কুমির দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা কুমির প্রজননকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। কুমিরের দৌড়ঝাঁপ দেখতে সেখানে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা। এই দুর্গম পাহাড়ের ওপর পানির কুমিরের দৌড়ঝাঁপ দেখে মনটা জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের। এই খামারটা আসলেই অত্যন্ত মন-মুগ্ধকর।

শৈল চূড়া দূর্বিন পর্যটনটি উপজেলার সোনাইছড়িতে প্রায় ৩ একর জুড়ে অবস্থিত। এ পর্যটন কেন্দ্রটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মনের মাধরী দিয়ে সাজিয়েছে মন-মুদ্ধকর করে। সদর উপজেলা থেকে ৪-৫ কিলোমিটার। সিএনজি,বাইক বা ইন্ঞ্জিন চালিত গাড়ী যোগে উঁচু নিচু পাহাড়ের অসংখ্য প্রজাতির গাছপালা আর জঙ্গলের বুক চিঁড়ে যেতে হবে সেই শৈল চূড়া দূর্বিন পাহাড়ের চূড়ায়। চারিদিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাবে যেন সবুজের সমারোহ। সেই সাথে পাখির কিচির-মিচির বনের নিস্তব্ধতাকে জাগিয়ে রাখে সারাক্ষণ। একবার বেড়াতে গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করে ভ্রমণ পিপাসুদের।

জুলাই ১৬,২০২২ at ১২:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোআাকা/রারি