উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে: বঙ্গবন্ধু টোল প্লাজা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার যানজট

মহাসড়কে যানজটের কারণে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না ঘরমুখো মানুষের। বঙ্গবন্ধু টোল প্লাজা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার যানজট। উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী ও গাড়ি চালকদের। গন্তব্যে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগছে সবারই। বাস টার্মিনাল, বাস স্ট্যান্ড, মহাসড়কের পাশাপাশি ফেরিঘাটগুলোতেও এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাওয়া দিয়ে ফেরিতে পার হচ্ছে বাইকাররা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের ২২ জেলার প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কে ধীরে ধীরে যানবাহন চলছে। টোল প্লাজায় পৌঁছতে তিন থেকে চার ঘন্টা লাগছে। টাঙ্গাই‌লের মহাসড়‌কে ৩৫ কি‌লো‌মিটার দীর্ঘ এলাকায় যানজ‌টের সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে।

শ‌নিবার সকালেই বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে টাঙ্গাই‌লের ক‌রটিয়া বাইপাস পর্যন্ত এই যান‌জটের সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান আরো অবনতি হয়। এ‌লেঙ্গা, সদর উপজেলার আশেকপুর, ঘারিন্দা, শিবপুর, রাবনা, বিক্রমহাটি রসুলপুর, পৌলি ও এলেঙ্গা এলাকায় যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। থেমে থেমে চলছে গাড়ি। প্রচন্ড গরমে যাত্রীদের হাসপাশ করতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা যানজ‌টের কব‌লে প‌ড়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে রাজধানীতে চলাচলরত অনেক যানবাহন ঈদযাত্রার সুযোগে দূরপাল্লার রুটে যাত্রী নিয়ে চলছে। এসব বাস উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছুটছে যাত্রী নিয়ে। এ কারণে মহাসড়‌কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। চাপ বে‌ড়ে যাওয়ায় তৈ‌রি হয়েছে যানজ‌টের।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসের যানবাহন চলাচল এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শুক্রবার এই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও আজ সকাল থেকেই বেশ স্বাভাবিক রয়েছে। টোল প্লাজায় দ্রুত গতিতে কাজ চলতে থাকায় যানবাহনকে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তাছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই আজ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের চাপ বেশ কম বলে জানা গেছে। প্রচেষ্টা পরিবহনের বাসের ধাক্কায় টোল প্লাজার একটি বুথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরেও এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে, মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে মানুষ এবং মোটরসাইকেলের চাপ রয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ যারা বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি তারা ফেরিতে পদ্মা পার হচ্ছে। এদের সংখ্যা একেবারেই কম না। তবে ঘাটে পৌঁছমাত্রই সবাই ফেরী পেয়ে যাচ্ছেন। এতে অনেকটাই স্বস্তিতে পদ্মা পার হয়ে ঘরের মুখে এগিয়ে যেতে পারছেন।

অন্যদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল চাপ খুবই কম। সাভার এলাকার সব রাস্তায় ফাঁকা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার, নবীনগর, বাইপাইল-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল জিরানী ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জামগড়া আশুলিয়া সড়ক বেশ ফাঁকা ছিল।

রাস্তায় বাসের জন্য শত শত মানুষ অপেক্ষায় থাকলেও গাড়ি পাচ্ছিলেন না। অনেকেই বাড়ি যেতে পারবেন কিনা তা বুঝতে পারছেন না। গাড়ি সংকটের কারণে অনেকেই আবার বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ঈদের আগের দিন যানবাহন ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। ঘাটে যানবাহনের তুলনায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি। ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা ফেরি পারাপার হতে পারছেন। তবে শনিবার এ চিত্র একেবারে উল্টো।

শুক্রবার জাতীয় যানবাহনের চাপে প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল ঢাকা গাজীপুর মহাসড়। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে শনিবারের চিত্র একেবারে পাল্টে গেছে। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এবং চান্দনা চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে সকাল থেকে তেমন যানজট নেই। নেই যাত্রীর চাপও। গাজীপুর এখন অনেকটাই শ্রমিক শূন্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন চলাচল ধীরগতি হলেও তেমন একটা ভোগান্তি নেই বলে জানা গেছে। মদনপুর সহ কয়েকটি জায়গায় কিছুটা যানজট থাকলেও যানবাহনকে থেমে থাকতে হচ্ছে না। এসব এলাকা দিয়ে সব ধরনের যানবাহন ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। লোকজনকে তেমন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে না।