রেল টিকেট বিড়ম্বনা গেল না!

ঈদের আগে টিকেট পেতে ভোগান্তির খবর নতুন কিছু নয়। যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ট্রেনের টিকেট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকেটের জন্য হাহাকার করছে ঘরমুখো মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বেশিরভাগ মানুষকে টিকেট না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। আবার অনলাইন জটিলতার কারণে অনেকে অপেক্ষা করেও টিকেট পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৩৮ আন্তঃনগর ট্রেনের মোট ২৭ হাজার ৮৮১টি অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৯০টি টিকেট ৬টি স্টেশন থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। বাকিগুলো অনলাইনে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস থেকে। টিকেটপ্রত্যাশীদের কেউ ১৮ ঘণ্টা তো কেউ ২২ ঘণ্টা, এমনকি কেউ ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর কেউ টিকেট পাচ্ছেন, আবার কেউ পাচ্ছেন না। প্রায় তিন যুগ ধরেই ঈদযাত্রায় অগ্রিম টিকেট কাটতে আসা সাধারণ মানুষ এমন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।

কিন্তু পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। তিন যুগে আসন সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৭ হাজারের মতো। আর ওই সময়ের মধ্যে ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭ কোটি (বছরওয়ারি)। চাহিদা অনুযায়ী টিকেটের সংখ্যা খুবই কম- এমনটা স্বীকার করে রেলমন্ত্রী গত শনিবার বলেন, ‘অবকাঠামো না বাড়িয়ে শুধু কোচ কিনে এ অবস্থার উন্নতি করা যাবে না। চাহিদা ও আমাদের যে সক্ষমতা, তার মধ্যে যে ফারাক তা যতক্ষণ পর্যন্ত কমাতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে খুব বেশি উত্তরণ করতে পারব না।’ মন্ত্রীর যেন সরল স্বীকারোক্তি।

তবে যে টিকেট রয়েছে তা যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় রাখা যায় যাত্রীদের ভোগান্তি কমত। এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পুরো টিকেট ব্যবস্থাকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে টিকেট বিক্রি করে টু-পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের হাত থেকে রেলের টিকেট উদ্ধার করার কোনো উদ্যোগ নেই। বাড়তি চাহিদার কারণে বাড়তি ট্রেন যোগ করারও কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায় না।

এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ রয়েছে। করোনার কারণে গত বছর অনেকেই ঈদুল আজহায় বাড়ি যাননি। আগের দুই বছরের চেয়ে কয়েকগুণ মানুষ এবারের ঈদে গ্রামমুখী হবে। সেই চাপ সামলানোর সক্ষমতা আমাদের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার নেই। ঈদযাত্রায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চ এই তিন বাহনকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। বন্যার কারণে দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা। ঢাকার প্রবেশ-বহির্গমন পথ থেকেই রয়েছে যানজট। পরিবহন ব্যবস্থাপনার অভাবে যানজট ও দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

এবার ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের পথগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সিলেটে ভয়াবহ বন্যার কারণে মহাসড়কের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব কারণে বেশিরভাগ মানুষ রেলপথকে বেচে নিয়েছে। রেলের এ বিড়ম্বনা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে সমাধান সম্ভব। তাহলে ঈদযাত্রা অনেকটাই নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখাও সম্ভব।

জুলাই ০৪,২০২২ at ১২:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/আক