এবারও বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ১ হাজার ৬৪৫ কোটি

বেশ কয়েক বছর ধরে এনবিআরের দেওয়া রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। পণ্য খালাসে নানা জটিলতা ও বন্দরের অব্যবস্থাপনা রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে বেনাপোল কাস্টমসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের অফিস না থাকায় এ ধরনের পণ্য এবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে কাঙ্খিত রাজস্ব আসছেনা। তবে, সুষ্ঠ ও নিরাপদ বাণিজ্য পরিচালনায় বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না গড়ে ওঠায় এমন হচ্ছে দাবী করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি ৮ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকার বিপরীতে এই রাজস্ব ঘাটতির পরিমান ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি পণ্য থেকে এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছিল দেড় হাজার কোটির বেশি। তবে বছর শেষের দিকে রাজস্ব পূরনে শঙ্কা দেখা দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। কিন্তু ৩০ জুন বছর শেষে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আদায়ে ঘাটতি থেকে যায় ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। পণ্য খালাসে নানান জটিলতা ও বন্দরের অব্যবস্থাপনা রাজস্ব ঘাটতির কারণ বলে জানিয়েছে কাস্টমস সূত্র।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতি ৩ হাজার ৩৯২ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১১৪৫ কোটি।

আরো পড়ুন :
চৌগাছায় মটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু
সবার জন্য আইন পাঠ জরুরি : কৃষ্ণা দেবনাথ

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক শহর হিসাবে পরিচিত কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। আমদানি পণ্যের মধ্যে বড় একটি অংশ কেমিকেল ও খাদ্য দ্রব জাতীয় পণ্য। এখান থেকে বড় অংকের রাজস্ব আসে সরকারের। তবে সুষ্ঠ ও নিরাপদ বাণিজ্য পরিচালনায় বন্দর ও কাস্টমসে আজও গড়ে উঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এতে গত ১০ বছর ধরে রাজস্ব আয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ছে।

বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে এতে বাণিজ্যেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে দক্ষিণবঙ্গের সাথে উত্তরবঙ্গে পণ্য পরিবহনে। তবে সুষ্ঠভাবে বাণিজ্য পরিচালনার জন্য বন্দরের অবকাঠামো বাড়ানো খুব জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে।

এছাড়া, প্রতিদিন থেকে ৭ ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও বন্দরে জায়গার অভাবে ৪০০ ট্রাকের বেশি পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।

আবার ফর্কক্লিপ ক্রেনের অভাবে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় মাসের পর মাস ট্রাক দাড়িয়ে থাকছে। এতে লেঅকশানে পড়ে অনেক ব্যবসায়ীরা এ পথে পণ্য আমদানি বন্ধ করেছেন। যার বিরুপ প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ের উপর।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, কেমিকেল ও খাদ্য দ্রব থেকে বড় রাজস্ব আসে। তবে বেনাপোল কাস্টমসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের অফিস না থাকায় এ ধরনের পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এ কারণে কাঙ্খিত রাজস্ব আয় আসছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে, বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরে নতুন জায়গা অধিগ্রহন, পণ্যগার তৈরী ও বন্দরের নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে। শেষ হয়েছে সিসি ক্যামেরা বসানো ও অটোমেশন পদ্ধতি। তবে সব স্থাপনা নির্মান শেষ হতে এখনো ২ বছর সময় লাগবে।

জুলাই ০৩,২০২২ at ২১:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমস্ব/রারি