আফগানিস্তানে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংসস্তূপ, স্বজন খুঁজছে মানুষ

আফগানিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া পাকতিয়া প্রদেশের ছোট্ট জেলা গায়ান। গোনাগুনতি ৫০ হাজার মানুষও থাকেন না জেলাতে। অনেকটা জঙ্গল। বাকি ছোট ছোট গ্রাম। গুটি কয়েক বসতি। মঙ্গলবার মাঝরাতের পর সেই সব গ্রাম আর বসতির বেশ কয়েকটি আর নেই।

মাটির ইটে মাটি দিয়ে গাঁথা সব বাড়ি। সেগুলো উইয়ের ঢিপির মতো ভেঙে ধুলো হয়ে গেছে। ছাদ এসে মাটিতে মিশেছে। এক একটি গ্রামে সেই ধ্বংসস্তূপের পাশে হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে জীবিত বাসিন্দাদের। বাকিরা অনেকেই ওই মাটিতে মেশা ছাদের নীচে।

রাত দেড়টা নাগাদ ভূমিকম্প হয় এই এলাকায়। যার তীব্রতা দিল্লিতেও অনুভূত হয়েছে বলে খবর। রিখটার স্কেলে ৬.১ ম্যাগনিচ্যুডের ওই কম্পনের কেন্দ্র ছিল পাকতিয়ার লাগোয়া খোস্ত প্রদেশের খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে। গায়ানের কাছেই। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

পাহাড়ি এলাকা, তার ওপর জঙ্গল- এমনিতেই রাত নামে তাড়াতাড়ি। মঙ্গলবার গভীর রাতে যখন ভূমিকম্প হয়, তখন গোটা গায়ানই ঘুমিয়ে ছিল। কিছুটা একই অবস্থা গায়ানের ঠিক পাশের জেলা বরমালেরও।

আয়তনে গায়ানের দ্বিগুণ বারমাল। কয়েকটি শহর, শহরতলিও রয়েছে। আছে প্রশাসনিক দপ্তর কার্যালয়, অফিস-কাছারি। যদিও গোটা জেলায় কোনও স্কুল নেই। নেই হাসপাতালও। আফগানিস্তানে স্থানীয় চ্যানেলের ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে বারমল থেকে হেলিকপ্টারে করে আহতদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্য প্রদেশে চিকিৎসার জন্য। কোথাও ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই প্লাস্টিকের চেয়ারে বসিয়ে চলছে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ।

আরো পড়ুন :
সিলেটে ব্যবসা বাণিজ্যে বড় ধাক্কা! ক্ষয় ক্ষতি হাজার হাজার কোটি টাকা
শতভাগ প্রস্তুত পদ্মা সেতু, বুঝে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ

মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। জখম কম করে দেড় হাজার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকতিয়া প্রদেশের দুটি জেলাই। ভূমিকম্প আর ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের নেতা হাইবাতুল্লা আখুন্দজাদা বুধবার জানান, অজস্র বাড়ি ভেঙে গেছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে এমন ভূমিকম্পে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে অনেকগুলি ফল্ট লাইন রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় ভূমিকম্প ঠেকানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই কেন?

জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে গত ১০ বছরে ৭০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পে। গড়ে প্রতি বছর ৫৬০ জনের ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় আফগানিস্তানে। ২০২২ সালের মতো তীব্র ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০২ সালেও। সেবারও হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছিল আফগানিস্তানে। ১৯৯৮ সালে একই ধরনের তীব্রতার ভূমিকম্পে সাড়ে চার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন দেশটিতে। তারপরও সতর্ক হয়নি আফগান প্রশাসন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে চলতে থাকা অবিরাম অস্থিরতাই এই পরিকাঠামোহীনতার কারণ। তাছাড়া তালিবান আমেরিকান সেনাবাহিনীকে উৎখাত করায় আর্থিকভাবেও ধসে পড়েছে দেশটি। বিদেশের ব্যাংকে দেশের বহু সম্পদ আটকে দেওয়ায়, বিপদে পড়েছে আফগানিস্তান।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ন্যূনতম খাবারটুকুও পান না। এই পরিস্থিতিতে এত বড় বিপর্যয় কি সামলাতে পারবে আফগানিস্তান? কাবুলে বসে দেশের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ অবশ্য জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাঠানো হচ্ছে বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে। তবে পাশাপাশি অন্য দেশগুলিকেও এগিয়ে আসতে বলেছে তালিবান নেতা। সাহায্য করতে বলেছে বিপদে পড়া দেশকে।

জুন ২৩,২০২২ at ১২:০৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/রারি