মুসলিম একাডেমী স্কুলে অবৈধভাবে নিয়োগ ও তথ্য জালিয়াতি করে বেতন-ভাতা টাইমস্কেল গ্রহণ করছেন ৫ শিক্ষক

যশোর শহরের মুসলিম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ ও তথ্য জালিয়াতি করে নিয়মিত বেতন-ভাতা টাইমস্কেলসহ যাবতীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন পাঁচ শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সব জাল-জালিয়াতির তথ্য প্রমাণিত হওয়ার পর দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিদের মোটাংকের উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ রেখেছেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা। ওই অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান) প্রদীপ কুমার দত্ত, সহকারি শিক্ষক (বাংলা) সালমা আক্তার, সহকারি শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) এইচ এম ইকবাল, সহকারি শিক্ষক (বাংলা) তয়্যৈবা খাতুন ও সহকারি শিক্ষক (কৃষি) লায়লা নাহার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে মুসলিম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা পরিদর্শক আব্দুস সালামের নেতৃত্বে পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ করা হয়। সেই পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ প্রতিবেদনে পাঁচ শিক্ষকের জাল জালিয়াতির তথ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান) প্রদীপ কুমার দত্ত ২০১০ সালের ২১ জুন বিদ্যালয়ে

যোগদান করেন। তার নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ৮ জুন দৈনিক স্পন্দন ও দৈনিক ভোরের কাগজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী প্রকাশিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৪/০৫/২০০৯ তারিখের শিম/শাঃ১১/৫-১(অংশ) ৫১৬ নম্বর প্রজ্ঞাপন মোতাবেক আবেদনের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী প্রকাশের পর ১৫ দিন পর্যন্ত আবেদনের সময় দিতে হবে। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই আইন মানা হয়নি। এতে যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রজ্ঞাপন লংঘন করে প্রদীপ কুমার দত্ত নিয়োগ নিয়েছেন। নিয়োগের পর থেকে তার গৃহীত সব বেতন-ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যোগ্য।

সালমা আক্তার ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর সহকারি শিক্ষক (বাংলা) পদে যোগদান করেন। ওই শিক্ষকের সহকারি শিক্ষক বাংলার নিবন্ধন সনদ নেই। তিনি প্রভাষক বাংলা পদের নিন্ধন ব্যবহার করে নিয়োগ নিয়েছেন। তাছাড়া তার নিয়োগের জন্য কোন জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। সেই হিসেবে তার নিয়োগ পুরোপুরি অবৈধ। তার গৃহীত সব বেতন-ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যোগ্য দিতে হবে।

এইচ এম ইকবাল ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই সহকারি শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) হিসেবে যোগদান করেন। সেই সময় দৈনিক রানার পত্রিকায় ওই পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞাতা চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী দেয়া হয়। কিন্তু তার অভিজ্ঞতার উপযুক্ত ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি। সেই হিসেবে তার নিয়োগও

অবৈধ। তার গৃহীত সব বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। সহকারি শিক্ষক (বাংলা) তয়্যৈবা খাতুন ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর যোগদান করেন। তিনি চাকুরীরত অবস্থায় ২০০৫ সালে বিএড সনদ অর্জন করেন। ২০০৬ সালের ১ জুলাই তিনি ৫১০০ টাকার টাইমস্কেল গ্রহণ করেন। বিধি মোতাবেক ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে তিনি ১১ হাজার টাকার স্কেল প্রাপ্য হবেন। সেই হিসেবে ২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ হাজার টাকার স্কেল গ্রহণ করায় তাকে অতিরিক্ত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

লায়লা নাহার সহকারি শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে ২০১০ সালের ৬ জুন যোগদান করেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণির বিএসসি ডিগ্রিধারী বিধায় ৬৪০০ টাকার স্কেল প্রাপ্য ছিলেন। কিন্তু তিনি ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ৮০০০ টাকার স্কেলে এমপিওভুক্ত হন। তিনি অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন। তার গৃহীত অতিরিক্ত টাকার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। সভাপতির নির্দেশনা ছাড়া আমি কোন ব্যবস্থা নিতে পারবো না।’ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম বলেন, ‘বিষয়টি সঠিক হলে শিক্ষা মন্ত্রণলায়ের প্রতিবেদনের পর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কেন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেননি এটা আমার জানা নেই। আমি

পুরো বিষয়টি জেনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেবে।’ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রাজিবুল আলমের এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার মোবাইলে কল দিলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

জুন ২০,২০২২ at ১৭:১২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রুআ/রারি