বদলগাছীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদ রানার বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের এক নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই নারী উদ্যোক্তা গত ১৪ জুন নওগাঁ জেলা প্রশাসক (ডিসি), স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) ও বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ঘটনাটি মিথ্য বলে দাবি করেছেন। অভিযোগকারী ওই নারী উদ্যোক্তা বলেছেন, যৌন হয়রানী করার বিষয়ে তাঁর কাছে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে। প্রশাসন তদন্ত করলে এর সত্যতা প্রকাশ পাবে।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ওই নারী মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৩ সালে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা ও ইতালী প্রবাসীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর দুই জমজ সন্তান রয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে মাসুদ রানা ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করতেন। তখন থেকেই মাসুদ রানার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তখন থেকে মাসুদ রানা তাঁকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। গত বছরের ২৬ নভেম্বর মাসুদ রানা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর মুঠোফোনে ও হাতে লেখা চিঠি দিয়ে তাঁকে বিভিন্নভাবে কু-প্রস্তাব দিচ্ছেলেন। তিনি বিষয়টি কয়েক জন ইউপি সদস্যকে জানান।

তাঁরা বিষয়টি সমাধান করেননি। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। চেয়ারম্যান মাসুদ রানা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ভার নেওয়ার পর জম্ম নিবন্ধনেরর কাজ তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ইউপির সহকারী সচিবের কাছে দায়িত্ব দিয়েছেন। ওই নারী উদ্যোক্তা বলেন, চেয়ারম্যান মাসুদ রানা আমাকে অসংখ্য ম্যাসেজ দিয়েছেন। এসব ম্যাসেজে অশ্লীল কথা লেখা রয়েছে। মাসুদ রানা আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতেন।

আমার স্বামী চেয়ারম্যানের কথা শোনায় আমাদের সংসার ভেঙেছে। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় তলায় বিট পুলিশের কক্ষে শোবার একটি খাট নিয়ে এসেছেন। একদিন চেয়ারম্যান আমার কক্ষে এসে আমাকে বলল, তোমার স্বামী নেই। তোমাকে উপভোগ করবো। তুমি দ্বিতীয় তলার কক্ষে চলে এসো। আমি চেয়ারম্যানকে নানান ভাবে বুঝিয়েছি আমার সন্তান আছে। আমার অনৈতিক কাজ করা সম্ভব নয়।

আরো পড়ুন :
সিলেটে বন্যার পানি কমতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে
বন্যার্তদের মাঝে মানবিক সাহিয্যে এগিয়ে এসেছে সিলেট জেলা পুলিশ

এতে আরও যৌন হয়রানীর ঘটনা বেড়ে যায়। অসহ্য হয়ে কয়েক জন ইউপি সদস্যকে চেয়ারম্যানের যৌন হয়রানীর বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাকে জম্ম নিবন্ধিনের কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আমি বাধ্য হয়ে ডিসি স্যার, ডিডিএলজি স্যার ও ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি চাই, প্রশাসন আমার অভিযোগটি তদন্ত করুক। আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩-৪ জন ইউপি সদস্য বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানীর বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমরা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি নিয়ে বুঝিয়েছি। এখন ঘটনা বাহিরে প্রকাশ হওয়ায় আমাদের পরিষদের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।

জানতে চাইলে মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা মুঠোফোনে বলেন, ওই নারী উদ্যোক্তা জম্ম নিবন্ধন কাজে অনেক বেশি ফিস আদায় করছিলেন। একারণে তাঁর কাছ থেকে জন্ম নিবন্ধনের কাজ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবং জম্ম নিবন্ধনের কাজ ইউপির সহকারী সচিবকে দেওয়া হয়েছে। একারণে নারী উদ্যোক্তা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। মুঠোফোনে ম্যাসেজ ও হাতে লেখা চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ওই নারী পরিষদের কাজ করেন। একারণে চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে মুঠোফোনে ম্যাসেজ ও হাতে লেখা চিঠি দিতেই পারি।

বদলগাছীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানার বিরুদ্ধে ইউপির ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানীর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জুন ২০,২০২২ at ১৩:২০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সাসার/রারি