ভারী বর্ষণ: উত্তরাঞ্চল প্লাবিত, মধ্যাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বন্যা

দুদিনের মধ্যেই দেশের উত্তরাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা বন্যাক্রান্ত হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরও জানায়, ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এর মধ্যেই সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় আজ শনিবার এবং আগামীকাল রবিবারও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। ফলে সেসব এলাকার বন্যার পানি আরও বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। সেই সঙ্গে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানি আবার নিচের দিকে নেমে এলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া সড়ক ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে আগেই সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। মোহনগঞ্জে রেলসেতু ভেঙে যাওয়ায় নেত্রকোনার সঙ্গেও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে।

যেসব জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে:
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ভারতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় তা দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা থেকে প্রবেশ করে আরও এগিয়ে আসছে।

ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বর্ষণ ও পহাড়ি ঢল উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

মেঘালয় ও আসামে ভারী বর্ষণ আশঙ্কা বাড়াচ্ছে:
মেঘালয় ও আসামে ভারী বর্ষণ আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে আরও ৫৫০ মিলিমিটার ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। এর আগে গত তিনদিনে এখানে আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া আসামে বৃষ্টি হতে পারে ৩০০ মিলিমিটার।

এসব এলাকার বৃষ্টির পানি সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড। মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। সিলেট, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে সুরমা নদী, কুড়িগ্রামে ধরলা, চিলমারিতে ব্রহ্মপুত্র, লরেরগড়ে জাদুকাটা, কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি, নাকুয়াগাঁওয়ে ভোগাই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।

বন্যার্তদের দুর্দশা। ছবি: সংগৃহীত

বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যাঞ্চলেও:
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ১২২ বছরের রেকর্ড এটি।

তিনি বলেন, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সেই বৃষ্টির পানি দ্রুতগতিতে সুনামগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে নেমে এসেছে। সেজন্য বন্যা অল্প সময়েই সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলাতেও আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এছাড়া উত্তরের জেলাগুলোর পানি নামার সময় সিরাজগঞ্জ, টাঙাইলসহ মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বন্যা হতে পারে।

জুন ১৮,২০২২ at ১৮:৩৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভক/জআ