বাংলাদেশ-উইন্ডিজ ‘পদ্মা সেতু’ সিরিজ শুরু রাত ৮টায়

অ্যান্টিগার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। সাকিব আল হাসান ফের সাদা পোশাকের নেতৃত্বে ফেরায় উজ্জীবিত টাইগাররা। ২০০৯ সালে সাকিবের নেতৃত্বে উইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জিতেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজের নামকরণ করা হয়েছে পদ্মা সেতুর নামে। টেস্ট সিরিজের প্রেজেন্টেড স্পন্সর বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। সিরিজের আনুষ্ঠানিক নাম ‘পদ্মা ব্রিজ ড্রিম ফুলফিল্ড ফ্রেন্ডশিপ টেস্ট সিরিজ প্রেজেন্টেড বাই ওয়ালটন।’ অফিসিয়াল লোগোতেও ঠাঁই পেয়েছে পদ্মা সেতু। ক্রিকেট বলের ঠিক উপরই উন্নয়নের সাহসী প্রতিকৃতি পদ্মা সেতুর ছবি।

সূত্র জানিয়েছে, অ্যান্টিগা ও সেন্ট লুসিয়ায় অনুষ্ঠেয় দুই টেস্টের সিরিজের নাম ‘পদ্মা সেতু ফ্রেন্ডশিপ টেস্ট সিরিজ’ করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তটি বুধবারই হয়েছে। টেস্ট চলাকালে মাঠের পেরিমিটার বোর্ডে থাকবে পদ্মা সেতু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। টেলিভিশনে টেস্ট ম্যাচের মাঝে পদ্মা সেতুর ছবি ও ভিডিও দেখানো হবে। বাংলাদেশ থেকে দর্শকেরা এই সিরিজের খেলা সরাসরি দেখতে পাবেন কিনা, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে বাংলাদেশে খেলা দেখানোর স্বত্ব কেনা টোটাল স্পোর্টসের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন চ্যানেল এখনো সিরিজ দেখানোর স্বত্ব কেনেনি। বিদেশ সফরে টাইগারদের প্রতিপক্ষের থেকে বেশি লড়তে হয় প্রতিকূল আবহাওয়ার বিরুদ্ধে। এবার উইন্ডিজ সফরে নিজেদের কাজটা সহজ হবে না সাকিব বাহিনীর। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সিরিজ শুরুর আগে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সফরকারীরা। বৃহস্পতিবার অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের আগে বাংলাদেশ দলের ভাবনার উদ্বেগে সেখানকার বাতাস।

এক ভিডিও বার্তায় দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। এখানে বাতাসের প্রবাহ থাকবে কিছুটা, বল ঘোরানোর ব্যাপারে অভ্যস্ত হতে হবে আমাদের।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৬টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জয় ৪টি, হার ১০টি ও ড্র ২টিতে। একটি বিপর্যয়ের পর অবশ্যই ভাগ্যের পরশ দরকার পড়ে। ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাড়াহুড়ো করে অধিনায়কত্ব পান মুমিনুল। জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের তথ্য না জানানোয় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব।

মুমিনুলের অধীনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় জয় আছে বাংলাদেশের। তবে বেশ কিছু ম্যাচ তারা হেরেছে, যেগুলোতে তাদের জয় পাওয়া উচিত ছিল। মুমিনুলের অধিনায়কত্বে বেশির ভাগ ম্যাচেই জয়ের অবস্থাতে থেকেও হেরেছে বাংলাদেশ।

বাজে ফর্মের কারণে মুমিনুল দলকে অনুপ্রাণিত করতে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। টানা সাত ইনিংসে এক ডিজিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে মুমিনুলের রান। আর সর্বশেষ ১৫ ইনিংসের মধ্যে ১২ বারই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি তিনি। অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের প্রথম কাজ হবে ব্যর্থতার কারণে বারবার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা টাইগার দলে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা। সাকিব নতুন করে অধিনায়ক হওয়াতে টেস্ট ফরমেটে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার নতুন আশার সঞ্চার করছে টাইগার শিবিরে। কারণ এই ফরমেটে ব্যর্থতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০০০ সালে ক্রিকেটের অভিজাত ফরমেটে প্রবেশের পর এখন পর্যন্ত ১৩২টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জয় আছে মাত্র ১৬টি, হার ৯৮টি। এর মধ্যে ৪৫টি ইনিংস ব্যবধানে হার রয়েছে তাদের। তবে ১৮টি টেস্ট ড্র করেছে, যার বেশির ভাগই বৃষ্টির কারণে। তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাকিব। সবারই প্রত্যাশা তার অধীনে এই ফরমেটে পুনরুজ্জীবিত হবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন:
সরকারি চাকরিতে ৩ লাখ ৯২ হাজার পদ শূন্য
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে যশোরে জাঁকজমক অনুষ্ঠান হবে

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ায় প্রথমবার অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন সাকিব। পরে সাকিবের নেতৃত্বে দুই ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ।

এরপর ২০১১ সালে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সাকিবকে। কিন্তু ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে আবারো অধিনায়কত্ব পান তিনি। ২০০৯ সালের সাকিবের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ২-০ ব্যবধানে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই সিরিজই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জয়। এখন দেখার বিষয় হলো- পরিচিত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আবারো অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের ফেরায় ভাগ্য বদল হয় কিনা বাংলাদেশের। বৃহস্পতিবার অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে ১৯ রান করতে পারলেই টেস্টে ৫ হাজার রানের মালিক হবেন তামিম।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৫ হাজার রান করেছেন মিডল-অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। গত মাসে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ১০৫ রানের ইনিংস খেলে বড় ফরমেটে ৫ হাজার রান পূর্ণ করেন মুশফিক। ৮২ টেস্টে ৫২৩৫ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে ৫ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশের দৌড়ে ছিলেন মুশফিক ও তামিম। মুশফিকের প্রয়োজন ছিল ৬৮ রান। আর তামিমের দরকার ছিল ১৫২ রান। দুই টেস্টের তিন ইনিংসে ৩০৩ রান করে ৫ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন মুশফিক। আর ওই সিরিজে তামিম করেন ১৩৩ রান। তাই অপেক্ষা দীর্ঘ হয় তামিমের।

জুন ১৬,২০২২ at ১৯:৩৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভক/জআ