সিট বাণিজ্য, নিপীড়ন ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হল সমূহে সিট বাণিজ্য, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোমবার (১৩ জুন) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ এ কর্মসূচি পালন করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে চলমান ছাত্র হয়রানি, বৈধ সিট থেকে নামিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মগুলো তুলে ধরে এর প্রতিবাদ জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলে থাকি এই বিশ্ববিদ্যালয় তথা সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়মগুলো হয় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ৫০ জন প্রতিবাদী শিক্ষক থাকতেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম করে কেউ পার পেতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমরা এখনো সে সংখ্যাটা পঞ্চাশে পৌঁছাতে পারি নি যদিও আমার কলিগদের সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি।’

তিনি যোগ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়মগুলো হচ্ছে তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ম হচ্ছে আমাদের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রদের আবাসন নিয়ে অরাজকতা। এখানে বৈধ শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে আবাসন পাচ্ছে না, যারা পাচ্ছে তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ চাঁদা দিয়ে পাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যদি হলের ছাত্রদের বৈধ আবাসন থেকে নামিয়ে দেয়া হয় অথবা তাদের কাছ থেকে যদি চাঁদা চাওয়া হয়, আমি এর চাইতে আর মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা আর কল্পনা করতে পারি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রকৃত চরিত্র হারাচ্ছে সেখানে কিসের র্যাংকিং? যেখানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক বিবেচনায় সেখানে র্যাংকিংয়ের আশা করেন কীভাবে?’

আরো পড়ুন:
ক্ষেতলালের বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরনের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
পদ্মা সেতু: সেতু ছুঁয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এখন কেবল কিছু কংক্রিটের অবকাঠামোর নিয়ে আছি। যেখানে বিল্ডিং আছে, গাড়ি আছে, আইন আছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নাই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেগুলার ক্লাস হয় না অথচ সান্ধ্যকালীন ক্লাস ঠিকই হচ্ছে। গবেষণা নিয়ে কথা হচ্ছে অথচ শিক্ষকরা তো ঠিকমত ক্লাসই নেন না।’

ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘আমি নিজেই একজন প্রকৃতই ভুক্তভোগী। হলের বৈধ সিট পেয়েও আমি তিন মাসের মধ্যে হলে উঠতে পারি নি। বর্তমান ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ আবাসিক হলসমূহে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বৈধ সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে।’

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসাইন, সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আখতার মজুমদার, চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম, রয়াসন বিভাগের আব্দুল্লাহ শামসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্ল্যা, সাংবাদিক জামাল কাদরী, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ এবং রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর।

জুন ১৩,২০২২ at ১৮:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আআ/জআ