পদ্মা সেতু: সেতু ছুঁয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

পদ্মা সেতু । ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র ১২ দিন বাকি। প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে নির্মিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অন্যতম ভিত্তি পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৫ জুন। বহু চ্যালেন্স আর বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু। এই সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে পূর্ণরুপে।

প্রতিটি পিলারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন। যে সেতু বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। ভাগ্যে খুলবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির। তাই পদ্মার বুকে ভাসছে বাংলার কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এজন্য সেতুটিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক (এক্সপ্রেস)। গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন ব্রড গেজ রেললাইন। সেতুর সংযোগ সড়কের পাশাপাশি সার্ভিস এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো।

৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। দ্বিতল সেতুর আপার ডেকে চার লেনের সড়ক, যার প্রস্থ ২২ মিটার। লোয়ার ডেকে থাকবে ব্রড গেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ। মাওয়া প্রান্তে সেতুর সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে ১ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট)। জাজিরা প্রান্তে তৈরি করা উড়ালপথের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। দুই পাশের ভায়াডাক্টসহ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে নয় কিলোমিটার। সেতুতে রেলপথের জন্যও তৈরি করা হয়েছে ৫৩২ মিটার উড়ালপথ।

জাজিরা প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ সড়কের জন্য পাঁচটি সেতু, ২০টি বক্স কালভার্ট ও ১২টি আন্ডারপাস তৈরি করা হয়েছে। মাওয়া প্রান্তের মতো জাজিরা প্রান্তেও টোলপ্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সার্ভিস এরিয়া-১, ওজন স্টেশন, জরুরি সহায়তা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

দ্বিতল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। নিচে স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। এজন্য ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেলপথ।

পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে সার্ভিস এরিয়া-১ ও ৩। এর বাইরে শরীয়তপুরের নাওডোবা এলাকায় তৈরি করা হয়েছে সার্ভিস এরিয়া-২। এখানে অফিস, ল্যাবরেটরি, মসজিদ, মোটেল, মেস, রিসোর্ট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, ফায়ার ডিটেকশন ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

হোটেল ব্যবসায়ী মোহন শিকদার জানান, সেতু উদ্বোধনের খবরে মাওয়ায় মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে সারাদিন এবং সন্ধ্যার পর শত শত লোক এখনো আসছেন, আমাদের বেচাকেনা অনেক ভালো হচ্ছে।

আরো পড়ুন:
যশোর জেলা মহিলালীগে পদ না পেয়ে পদবঞ্চিতদের মানববন্ধন
একশ টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি, স্কুলছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

শিবচরে ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের ব্যবসায়িক কাজে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন ঢাকায় যেতে হয় দোকানের মালামাল কিনতে। ঢাকায় যাওয়া-আসা এবং মালামাল কিনে ফিরে আসতে কমপক্ষে দুদিন সময় ব্যয় করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা সকালে ঢাকায় গিয়ে মালামাল কিনে নিয়ে বিকেলের মধ্যে এসে বেচাকেনা করতে পারব। এতে করে আমাদের সময় এবং খরচ কমবে। তাতে আমাদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু শুধু একটি স্ট্রাকচার নয়, এটি একটি স্বপ্নের নাম। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই এলাকার জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। এই এলাকার মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সুফল ভোগ করতে এখন শুধু সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা। সবার মধ্যে আলাদা উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু বাঙালির সক্ষমতার পদ্মা সেতু। বহু চ্যালেন্স আর বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু। এই সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে পূর্ণরুপে। প্রতিটি পিলারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন। যে সেতু বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। ভাগ্যে খুলবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক সুফল ইতোমধ্যে এলাকাবাসী পেতে শুরু করেছে।

জুন ১৩,২০২২ at ১৮:১২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এদহ/জআ