ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসার রুপমের অনিয়ম দূর্নীতি চরমে, দেখার কেউ নেই

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসার রোজদার আলী রুপমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে আনসার সদস্যরা। অনিয়ম দূর্নীতি করে প্রতিমাসে আনসার সদস্যদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

ঝিনাইদহ জেলার অধিনস্থ পিসি (প্লাটন কমান্ডার) তাহাজ উদ্দিন ও কুষ্টিয়া জেলার অধিনস্থ পিসি (প্লাটন কমান্ডার) মো. আহসান উল্লাহ লালু’র যোগসাজশ থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। নিরব চাঁদাবাজী আর অনিয়ম মেনেই আনসার সদস্যরা তাদের সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিবাদ না করায় দিন দিন সিকিউরিটি অফিসার রোজদার আলী রুপমের অত্যাচার ও দূর্নীতি বেড়েই চলেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটির জন্য দুই জেলার দুইজন কমান্ডার, দুইজন সহকারী কমান্ডারসহ ৯৪ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন। ঝিনাইদহ জেলার অধিনস্থ আনসার সদস্য রয়েছে ৪৪ জন ও কুষ্টিয়া জেলার অধিনস্থ ৫০ জন আনসার। এর মধ্যে কুষ্টিয়া গাড়ী গ্যারেজ, ট্রেজারার মহাদ্বয়ের বাসভবন, প্রোভিসি মহাদ্বয়ের বাসভবন, রেজিস্টার মহাদ্বয়ের বাসভবন ও ইবি ক্লাবসহ সেখানে ১৪ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। বাকি আনসার সদস্যরা ইবি ক্যাম্পাসে এ, বি ও সি তিন সিপ্টে দায়িত্ব পালন করছে।

কুষ্টিয়া অধিনস্থ এ সিপ্টে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পযন্ত ডিউটি করেন ৯জন, বি সিপ্টে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত ১৯ জন ও সি সিপ্টে রাত ৮ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৩ জন আনসার সদস্য সিকিউিরিটির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ঝিনাইদহ অধিনস্থ এ সিপ্টে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডিউটি করেন ১০ জন, বি সিপ্টে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত ৯জন ও সি সিপ্টে রাত ৮ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৭ জন আনসার সদস্য সিকিউিরিটির দায়িত্ব পালন করেন।

সরোজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইবি ক্যম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের নিচতলা আনসার ব্রাকের কার্যক্রম চলছে। আবাসন সংকট হওয়ায় যাদের বাড়ী ইবি ক্যাম্পাসের নিকটে তারা নিজেদের সুবিধার্তে বাড়ীতে থাকেন। মোট ৯৪ জন আনসার সদস্যদের মধ্যে ৪৫ জন আনসার সদস্য বাড়ি থেকে এসে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এর জন্য একজন আনসার সদস্যকে গুনতে হয় প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে।

৪৫ জন আনসারের কাছ থেকে সিকিউরিটি অফিসার রোজদার আলী রুপম দূর্নীতি করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে সাড়ে ২২ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, রেশন থেকে আনসার সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিমাসে উত্তোলন করছে ২ বস্তা করে চাল। প্রতিমাসে চলমান ডিউটি পোষ্ট ফাকা রেখে হাতিয়ে নিচ্ছে আরো ১৫ হাজার টাকা। গত ২০-৫-২২ ইং তারিখে ৩টি ডিউটি পোষ্ট ফাকা রাখেন সিকিউরিটি অফিসার। ডিউটি পোস্টগুলো হলো, ভি.সি বাংলো বি সিপ্ট ২ জন দায়িত্ব পালন করার কথা সেখানে ১ জন সিকিউরিটির দায়িত্ব পাল করেন।

ইন্টারন্যাশন্যাল ব্লক বি সিপ্টে ১ জন আনসার সদস্যের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও সেখানে একজনও ছিলনা ও আবাসিক এলাকা সি সিপ্টে রাত্রিকালীন ৩ জন দায়িত্ব পালন করার কথা সেখানে দায়িত্ব পালন করে ২ জন। ওইদিন রাত্রিকালীন কর্তব্যরত সুপার ভাইজার আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি জানতে পেরে এস্টেট অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। যা তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে। এভাবেই হজবরল অবস্থায় ইবি’ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার কার্যক্রম চলছে।

এখানেই শেষ নই, সিকিউরিটি অফিসার রোজদার আলী রুপমের অনিয়ম, প্রতি সপ্তাহে আনসার সদস্যদের মেস থেকে দুইকেজি করে গরুর মাংস ও কাঁচা তরকারি নিজের বাসায় নিয়ে থাকেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বদলি করার হুমকি দেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক আনসার সদস্যরা বলেন, ইবি ক্যাম্পাসে থেকে ডিউটি করার নিয়ম থাকলেও আবাসন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় নিজেদের সুবিধার্থে বাড়ি থেকে এসে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর জন্য সকলে ৫০০ টাকা করে সিকিউরিটি ইনচার্জকে দেয়, যেকারণে আমরাও দিয়ে থাকি। আরেকজন আনসার সদস্য বলেন, অনেকেই বিভিন্ন মৌসুমে ২/৩ মাস করে বাড়িতে থেকে তরমুজসহ বিভিন্ন চাষ করেন।

আরো পড়ুন :
আদিতমারীর পলাশী ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাইজেশন এর উদ্বোধন
বাজেট নিয়ে সমালোচনার উত্তর দিলেন অর্থমন্ত্রী, সঙ্গে প্রতিশ্রুতি

এর জন্য সিকিউরিটি অফিসারকে ৪/৫ হাজার টাকা করে প্রতিমাসে দিতে হয়। আনসার সদস্যরা চাষ করে লাভবান হয়, যেকারণে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা দিতে সমস্যা হয়না। এতে করে বড় ছুটি কাটাতে পারে। ২/৩ মাস ছুটিতে থাকলে তার দায়িত্বকে পালন করে এমন প্রশ্নে একজন আনসার সদস্য বলেন, আমি না থাকলে আমার ডিউটি আরেকজন করে দেয় এতে করে দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যঘাত ঘটেনা। তবে আমার ডিউটি আরেকজন করলে তাকে ১৫০ টাকা দিতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পযন্ত দুই ক্যাম্পের অধীনে প্রায় ২০জন আনসার সদস্য ছুটিতে রয়েছেন। ঝিনাইদহ ক্যাম্পের অধীনে আনসার সদস্য রাজেন গত চারমাস যাবদ ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত রয়েছে। মাঝে মধ্যে তিনি এসে হাজিরা খাতায় সই করে যান। কর্মস্থলে না থেকেও প্রতিমাসে বেতন পাচ্ছেন। তার আইডি নাম্বার ৮১৭৯।

এভাবেই বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি করে ১২ বছরে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। চাকরীর আগে রোজদার আলি রুপমের তেমন কিছুই ছিলনা, কৃষক পরিবারের ছেলে ১২ বছর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা কর্মকর্তা (অর্থ ও হিসাব) শাখায় প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরীতে যোগদান করেন।

বিগত ১০ বছর এস্টেট অফিসের অধীনে নিরাপত্তা সেলের কর্মকর্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাত্র ১০ বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। নিজ গ্রাম হড়িয়ারঘাটা বাড়ী করেছেন, কুষ্টিয়া শহরের বারখাদায় ১টি প্লট ও কুষ্টিয়া হরিপুর ব্রীজের পাশে ১টি প্লট ক্রয় করেছেন যার মুল্য আনুমানিক কোটি টাকা। সচেতন মহলের দাবী ইবি ক্যাম্পাসে সিকিউরিটি অফিসারের চাকরী করে কিভাবে মাত্র কয়েক বছরে এতো সম্পত্তির মালিক হয়েছেন!

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামী বিসশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসার রোজদার আলী রুপম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পন্ন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মূলক। ইবি ক্যাম্পাসে আনসার সদস্যদের ছুটির কোনো সুযোগ নেই। একজন ডিউটি না করলে তার জোড়া ডিউটি করে দেয়। আর ডিউটি পোস্ট ফাঁকা রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করে দুই জেলার দুজন কমান্ডার।

জুন ১১,২০২২ at ২০:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সুখা/রারি