নাড়ি-ভুঁড়ি হাতে ভাইরাল কবির বেঁচে গেলেন

পেট থেকে বের হয়ে আসা নাড়ি-ভুঁড়ি ধরে আছেন এক হাতে; আরেক হাতেও জখমের দাগ। পরনের লুঙ্গি রক্তে ভেজা; হাসপাতালের মেঝেতে শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের ছোপ; চোখ-মুখে আতঙ্ক। গত শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত মো. কবিরের এ ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে আসায় কবির বেঁচে ফিরবেন, এমন আশা খুব কম মানুষই করেছিলেন। তবে অবিশ্বাস্য হলেও কবির সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বলতে গেলে নতুন করে জীবন পেয়েছেন তিনি।

পেটের ভুঁড়ি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কবিরকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। কবির ভোলার চরফ্যাশনের নীল কমল ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাদেক সরকারের বড় ছেলে। চট্টগ্রামে এসে এক আত্মীয়ের সহযেগিতায় পাঁচ বছর আগে বিএম ডিপোতে পণ্য খালাসের কাজ নেন। কন্টেনারে করে আসা তুলা খালাসের কাজ করেন তিনি।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কবির সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে আগুন ধরে গেলে আমি দূর থেকে আগুন দেখছিলাম। হঠাৎ করে কিছু একটা উড়ে এসে আমার শরীরে লাগে। এতে পেটের ডান পাশের ভুঁড়ি বের হয়ে আসে। ডান হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে যায়। আমি ব্যথায় চিৎকার করতে থাকি। এরপর আমাকে একজন ধরাধরি করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়।

ভুঁড়ি চেপে ধরেই আমি হাসপাতালে চলে আসি। নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে আসায় এক সময় মনে হচ্ছিল, আমি বোধ হয় আর বাঁচব না। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় এবং ডাক্তারদের অশেষ চেষ্টায় আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমি ও আমার পরিবার ডাক্তারদের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। সুস্থ হওয়ায় শুকরিয়া আদায় করছি।

সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সময় মতো না আসলে তাকে (কবির) বাঁচানো সম্ভব হতো না। হাসপাতালে আসার পর ওই রোগীর বিপি (ব্লাড প্রেশার) নেমে আসছিল। প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার করে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল করা হয়। পরের দিন দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে পেটে ভুঁড়ি প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ। তবে ওই রোগীকে আরো বেশ কয়দিন ফলোআপে থাকতে হবে বলে সাংবাদিকদের জানান সার্জারি বিভাগের এমএস রেসিডেন্স ডা. সৈয়দ আফতাব উদ্দীন।

এদিকে, অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও কবিরকে তেমন ভারি কাজ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে কবিরের সংসারে। কবিরের স্ত্রী তাসনুর বেগম জানান, চার মেয়ে ও এক ছেলের সংসারে তার স্বামী-ই একমাত্র উপার্জনক্ষম। কিন্তু আগের মতো স্বাভাবিক সব কাজ করতে না পারলে আয়-রোজগারের কি হবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

চিকিৎসা ও সেবায় হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা বেশ আন্তরিক জানিয়ে তিনি বলেন, ওষুধ-পত্র যা প্রয়োজন, সবই দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দুই সন্তানের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তার কথাই জানালেন কবিরের স্ত্রী।

জুন ১০,২০২২ at ২১:৪৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেআ/রারি