নেতার হাতে লাঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বিষপানে আত্মহত্যা

ছবি : প্রতিকি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেলাট গ্রামে দাউদ শেখ (৭০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। উপজেলার বারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার অপমান সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। দাউদ হোসেন কালীগঞ্জ উপজেলার ৯ নং বারবাজার ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত ৭ জুন উপজেলার বারবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়।

এই মিছিলে না যাওয়ায় ওইদিন সন্ধ্যায় একটি চায়ের দোকানে চুল-দাড়ি ধরে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। এরপর রাতে তিনি ক্ষোভে-দুঃখে বিষপান করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বারবাজার অপু ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে পকেট থেকে তিনি একটি চিরকুট বের করে দেন।

এসময় চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যানের সাথে থাকা কনক, জাহিদসহ কয়েকজন চিরকুটটি ছিনিয়ে নেয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

দাউদ শেখের ছেলে আলিম হোসেন জানান, ৭ জুন রাতে তার বাবা বিষপান করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে মারা গেছেন। তার বাবার কাছে থাকা চিরকুটের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। চেয়ারম্যানের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কথা শুনে তিনি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান তাকে বলেন, মিছিলে না যাওয়ায় চাচার মুখ ধরে ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম।

চাচা-ভাস্তে ইয়ার্কি মেরেছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। দাউদ হোসেনের নাতি শাকিল হোসেন জানান, নানাকে উদ্ধার করে বারবাজার অপু ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে গেলে নানা একটি চিরকুট বের করে দেন। চিরকুটটি রাকিব নামের একটি ছেলে পড়ে। সেই চিরকুটে লেখা ছিল চেয়ারম্যান তাকে অপমান ও মারধর

করেছে। তার মৃত্যুর জন্য চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দায়ী বলেও চিরকুটে লেখা ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব হোসেন জানান, বারবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় দাউদ শেখের সাথে দেখা। তখন তার মুখ দিয়ে বিষের গন্ধ বের হয়। তখন তার কাছে থাকা বিষের বোতলও দেখান। পরে তাকে বারবাজার অপু ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে তিনি একটা মোবাইল দেন। এ সময় তার পকেটে থাকা একটি চিরকুট দেন। এ সময় অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বাইরে এসে তিনি চিরকুটটি পড়েন।

চিরকুটে লেখা ছিল, তাকে দোকানে অপমান করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। চিরকুটে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন। এরপর চেয়ারম্যানের সাথে থাকা কনক ও জাহিদ চিরকুটটি নিয়ে নেয়।

কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, বিষপান করার পর যশোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাউদ শেখ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। যশোরে ময়নাতদন্ত হবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

জুন ১০,২০২২ at ১৯:৩৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আক/রারি