তালায় পাখিমারা বিলের টিআরএম চালু ও পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের দাবি

পাখিমারা বিলের টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ ও কপোতাক্ষ নদে সময়মত বাঁধ (ক্রসড্যাম) না দেয়ায়চ প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটায় আবারো পলি জমে ভরাট হচ্ছে কপোতাক্ষ নদ । এ অবস্থা চলতে থাকলে আবারো কপোতাক্ষ নদ বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হওয়ার আশংকা বিরাজ করছে। ৯০দশকে কপোতাক্ষ অববাহিকায় জলাবদ্ধতায় জনজীবন অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়।

জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে জলাবদ্ধতার সমাধানকল্পে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়) অনুমোদন দেন। প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই মাস হতে শুরু হয়ে সমাপ্ত হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিল ৯০কিলোমিটার নদী খনন এবং তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন।

পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে ১৫ লক্ষ অধিবাসী। অববাহিকার মানুষরা এখন নির্বিঘ্নে ধানচাষ, মাছ চাষ, সবজি চাষ ও পশুপালন করতে পারছে। বসতি এলাকা, চলাচলের রাস্তা ও বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠানসমূহ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত ও এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে গত ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৪ বছর মেয়াদী ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প’ ২য় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির মূল কাজ হলো পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং যশোরের চাকলা ব্রীজ হতে উজানে তাহিরপুর এবং তালার শালিখা হতে কয়রার আমাদী-খাজরা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদ খনন।কাজেই ২য় পর্যায়ের খনন প্রকল্প শুরুর সাথে সাথে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

কিন্তু বর্তমানে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিআরএম বিল অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সম্ভব হয়নি।বিল অধিবাসীদের বক্তব্য পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ উপকৃত হলেও তাদের দুঃখ দুর্দশা ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

অম্ফান,আয়লা, সিডর, ঘূর্ণিঝড়, জলোছাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের টি আর এম এর পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। ভেসে যায় ফসলীক্ষেত, মৎস্য খামার এবং চলাচলের রাস্তা।বর্তমানে ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে টি আর এম এর পেরিফেরিয়াল বাঁধ।

এমতাবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থে ও জনগণের দাবীর মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে বিগত ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখ বেধে দিয়ে টিআরএম বন্ধ করা হয় যা এখনও বন্ধ রয়েছে। এদিকে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে কপোতাক্ষ নদ যে পরিমাণ প্রশস্ত ও গভীর হয়েছিল তা আবারও পলি দ্বারা ভরাট হতে শুরু করেছে। এখন পলি মৌসুম চলছে। টিআরএম না থাকায় বালিয়া কাট পয়েন্টের উজানে প্রতিবছর যে ক্রসড্যাম

দেওয়া হয় নদের উপর সেটিও এবার দেওয়া হয়নি। ফলে পলি জমে সংযোগ খাল মুত্যুমুখে পতিত হয়েছে এবং কপোতাক্ষ নদ আবারও সবার চোখের অগোচরে ভরাট হচ্ছে। বর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটির খনন কার্যক্রম শালিখা থেকে নিম্নাংশে ৩০ কিমি. নদী পুনঃখনন কাজ ধীর গতিতে চলমান রয়েছে, যেখানে স্বচ্ছতার সাথে ডিজাইন অনুযায়ী নদী খনন দেখতে চান স্থানীয় জনগণ ও উপজেলা পানি কমিিট। এনিয়ে পানি কমিটি জনগণের পক্ষ থেকে গতকাল বিকালে মোবারাকপুরাস্থ উত্তরণ হল রুমে উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মাষ্টার ময়নুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে তিনি জরুরী ভিত্তিতে কপোতাক্ষ নদে সময়মত বাঁধ (ক্রসড্যাম),পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার পূর্বক টিআরএম চালু, টিআরএম বিল অধিবাসীদের প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের বকেয়া টাকা ও দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের শুরুতে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ পূর্বক টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সাথে দ্রুত দ্বিতীয় পর্যায় নদী পুনঃখননে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকল মহলের জোরালো ভূমিকা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

জুন ০৮,২০২২ at ১৭:৫৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রীটি/রারি