চোখে জল, স্বজনের সন্ধান পেতে তারা দিচ্ছেন ডিএনএ নমুনা

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মাঝে ২২ জনের পরিচয় শনাক্তের কথা জানানো হয়েছে। আরো অনেকের পরিচয় এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার কথা আগেই জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার উদ্দেশ্যে গতকাল সোমবার সকাল থেকে আলামত (নমুনা) সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি বুথ স্থাপন করে এ নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডির একটি টিম। নমুনা সংগ্রহে ঢাকার ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডির ৫ জনের একটি টিম চট্টগ্রামে এসেছেন। তারাই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছেন। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ২১টি মরদেহের পরিচয় শনাক্তে মোট ৩৭ জনের কাছ থেকে নমুনা (আলামত) সংগ্রহ করা হয়েছে এ বুথে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিআইডি) জাহাঙ্গীর আলম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহতদের নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে এ নমুনা নেয়া হয়েছে। একটি মরদেহের বিপরীতে একাধিক জনের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। আর ডিএনএ পরীক্ষার সুবিধার্থে সবকয়টি মরদেহ থেকে আগেই আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয় জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মঙ্গলবারও (আজ) ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কেউ যদি নিখোঁজ থাকেন, তবে তাদের নিকটতম আত্মীয়রা এসে এখানে নমুনা দিতে পারবেন।

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আবদুস সোবহান। তার বাড়ি বাঁশখালীর নাপোড়ায়। শনিবার রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকেই তার খোঁজ মিলছে না। এখন পর্যন্ত ২২টি মরদেহ শনাক্ত হলেও আবদুস সোবহানের মরদেহের খোঁজ পায়নি তার পরিবার। তাই অজ্ঞাত মরদেহগুলোর মধ্যে আবদুস সোবহানের মরদেহও থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। যাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি তাদের স্বজনদের নমুনা নেওয়া হচ্ছে জেনে গতকাল সকালে চমেক হাসপাতালে ছুটে এসেছেন সোবহানের পরিবারের সদস্যরা। তাদের সাথে আসে সোবহানের ছোট্ট মেয়ে ফাইজা রহমানও। বাবার পরিচয় শনাক্তে ফাইজার নমুনা নেয়া হয়। একই সাথে নেয়া হয় তার ফুপি উম্মে কুলসুমের নমুনাও। নমুনা দিলেও বাবার পরিণতি সম্পর্কে কিছুই জানে না ফাইজার। তার যে বুঝার জ্ঞানই হয়নি।

বুথের সামনে নমুনা দিতে বসেও স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে খেলছিল ফাইজা। যদিও পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফাইজার মা ইস্ফাহান সুলতানার চোখের জল যেন থামছিল না। পরিবারের সদস্যরা জানান, ডিপোতে সোবহানের খোঁজ না পাওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন তারা। কিন্তু হাসপাতালেও খোঁজ মেলেনি সোবহানের। খোঁজ না পাওয়াদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কথা জেনেই এখানে এসেছেন তারা। আড়াই বছর আগে ইস্ফাহান সুলতানার সাথে বিয়ে হয় সোবহানের।

শনিবার রাতের কথা বলতে গিয়ে সোবহানের স্ত্রী ইস্ফাহান সুলতানা বলেন, আগুন লাগার পর সেদিন রাতে ভিডিওকলে সে আগুনের ঘটনা দেখাচ্ছিল আমাকে। আমি তাকে বারবার দূরে সরে যেতে বলছিলাম। সে বলছিল নিরাপদ দূরত্বেই আছে। কিন্তু ভিডিওকলে কথা বলার মাঝেই হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর কল কেটে যায়। তারপর স্বামীর আর খোঁজ পাইনি। খোঁজ না পেয়ে এখানে (হাসপাতালে) আসি। হাসপাতালেও তার কোনো খোঁজ পাইনি। নমুনা নেয়া হচ্ছে জেনে এখন নমুনা দিতে এলাম।

সোবহানের মতো পরিচয় শনাক্ত করতে না পারা ২১ জনের নিকটতম আত্মীয়রা ডিএনএ’র নমুনা দিয়েছেন গতকাল। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন বুথে দায়িত্বরত ঢাকা থেকে আসা সিআইডি কর্মকর্তা এসআই নাজমুল আলম টুটুল ও এসআই সাইফুল।

জুন ০৭,২০২২ at ০৯:২০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দআ/রারি