ধান গোছাতে মহাব্যস্ত গ্রামীণ নারী

মহাব্যস্ত সময় পার করছে গ্রামীণ নারীরা। বোরো ধান নিয়ে নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই তাদের। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধান পরিস্কার পরিছন্ন করার কাজে ব্যাপক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।

ভেজা ধান শুকানো, মাড়াই, বস্তা করা, বিচালী শুকানো, সিদ্ধ করাসহ সকল কাজ করছেন তারা। ঈদের পর থেকে নিয়মিত ভারী, হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে প্রায় ৬০ ভাগ কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। নষ্ট হয়েছে তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল।

বৃষ্টির পানিতে ভিজে ধানে কল গজিয়ে নষ্ট হয়েছে তাদের সকল পরিশ্রমের ধন। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে যশোর জেলায় ধান চাষ হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে।

লক্ষ্যামাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। সারাদেশে গড়ে হেক্টরে ৫.৮২ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হলেই বাম্পার ফলন ধরা হয়। যশোরের কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার যশোরে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে।

বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা থাকলেও ঈদের পর থেকে নিয়মিত ভারী, হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি সে হাসি কেড়ে নিয়েছে। চলতি মাসের ৯ ও ১০ তারিখের ভারী বর্ষণে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন নষ্ট হয়েছে। ৬০ ভাগ কৃষকের কাটা ধান ভিজেছে পানিতে। তলিয়ে গেছে পাকা ধান। জমিতে জমেছিল হাটু বা মাজা সমান পানি। এতে করে ধান রাখার জন্য উচু কোন জায়গা ছিল না।

যে যেভাবে পেরেছে রাস্তার উপর বা মাছের ঘেরে গাবিতে ধান তুলেছে। কিন্তু পরপর কিছুদিন বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশে কারণে রোদ বের হয়নি মোটেও। ফলে ধানে কল গজিয়েছে আর বিচালীও নষ্ট হয়েছে। শত পরিশ্রমের সম্পদ নষ্ট হওয়া কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না কৃষক। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ে কৃষক।

তারপরেও বসে নেই কৃষক পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত শেষ সম্বল গোছাতে চেষ্টার ত্রুটি করছে না। কাঁদা-পানিতে নেমে ঘরে তুলছে কষ্টে অর্জিত ভেজা ধান। মাঠে বা বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার উপরে ধান তুলে মাড়াই, শুকানো, বস্তাভরা, বিচালী বা পল শুকানো, কুলোয় করে ধান উড়ানো সব কাজ নারীরা করছে আপন মহিমায়।

আরো পড়ুন :
মদনে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজশাহীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, মেডিকেলে লাশ ফেলে পালিয়ে গেলো স্বামী

পুরুষরা মাঠ থেকে ভেজা ধান পাকা রাস্তায় এনে রাখছে আর নারীরা তা ঘরে নেয়ার সার্বিক কাজ করছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের নাওয়া-খাওয়া নেই। ধান পরিস্কার পরিছন্ন করার কাজে ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করছে তারা।

জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, কৃষক মাঠের ধান সব তুলেছে পিচের রাস্তার উপরে। কৃষক-কৃষাণীরা ধান গোছাতে মহা ব্যস্ত। এসময় কথা হয় লাকি খাতুন নামের এক গৃহবধুর সাথে। তিনি জানান, তাদের তিন বিঘা ধান চাষ করেছিল।

একটি ধানও ভাল নেই। সকল ধানে কল গজিয়ে গেছে। তারপরও ধানতো ফেলে রেখে যাওয়া যাবে না। তাই সবাই মিলে নষ্ট ধান গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সিদ্ধ করে চাল বানানোর মত কোন ধান নেই।

কি যে খাবো তা নিয়ে আছি মহাচিন্তায়। হাফিজা নামের এক গৃহবধু জানায়, আমার স্বামী মালেশিয়ায় থাকেন। ছেলেটা লেখাপড়া করে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাকে কাজে লাগাতে পারছি না পড়াশুনার ক্ষতি হবে তাই। সেজন্য সকল কাজ আমাকে

একাএকা করতে হচ্ছে। একবিঘা ধান পানিতে ভিজে কল হয়ে গেছে। তবুও পরিস্কার পরিছন্ন করেছি। বিক্রয় করে ভাল ধান কিনে সিদ্ধ করব চাল বানানোর জন্য।

এ ব্যাপারে যশোরের ঝিকরগাছার কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, কৃষক তার কষ্টে অর্জিত ধান ঘরে তুলেছেন। বৃষ্টির কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যে পরিমাণ এ্যাফেক্টেড হয়েছিল তার ২০% ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কৃষক কাটিয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মে ২১,২০২২ at ১৮:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআ/রারি