যমুনায় বাড়ছে পানি, ভাঙনের আতঙ্কে যমুনা তীরের মানুষ

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে দ্রুতগতিতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির কারনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে।

গত দুই দিনে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পাকুরতলা, আরকান্দি, ঘাটাবাড়ি ও জালালপুরের ৪টি গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের সময় মানুষজন নিজেদের জীবন বাঁচাতে পারলেও জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেনি। চোখের সামনে সব কিছু যমুনা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া পরিবারের লোকজন সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় হয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে।

এদিকে, কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধ, ফসলি জমি এবং চৌহালী উপজেলার মিটুয়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর-সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক, বিনানুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় বহু ঘর-বাড়ি ও ফজলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এতে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা ভাঙন আতংকে দিন পার করছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন নদীর নি¤œাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শনিবার (২১ মে) সকাল ১১ টায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় পানির বিপৎসীমা ধরা হয় (১৩ দশমিক ৩৫) সেন্টিমিটার। আজ শনিবার সকালে পানি রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুলতান মাহমুদ জানান, নদীতে ঘর-বাড়ি হারানো পরিবারদের জন্য দ্রুত সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু এখনও কোন সাহায্য সহযোগিতা হাতে পায়নি। পেলে তাদের মাশে বিতরণ করা হবে।

এ বিষয়ে বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা জানান, চৌহালীর দক্ষিণাঞ্চল রক্ষায় স্থায়ী তীর সংরক্ষণে ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুনেছি অনুমোদনের অপেক্ষায়। তবে কবে নাগাদ এটি অনুমোদন ও কাজ শুরু হবে তা জানা নেই। বর্ষার আগেই কাজটি শুরু করলে হয়তো দক্ষিণাঞ্চলের বহু বাড়ি-ঘর রক্ষা পেত। গত ১ সপ্তাহে নদীপাড়ের প্রায় ৫০টি বাড়ির ভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে।

কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, যমুনার ভাঙনে নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের অনেকগুলো বাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধিতে নাটুয়ারপাড়ার পশ্চিমে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা, কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী, চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা ইয়াসমিন বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গণ রোধে আমরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে এদের সাহায্য সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে পূর্ণবাসন করা হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। পানি আরও ৩/৪ দিন বাড়বে। পানি বৃদ্ধি পেলেও শহর রক্ষা পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে বালির বস্তা ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। চৌহালীতে ভাঙন রক্ষায় অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত ২ মাস ধরে দফায় দফায় পানি বাড়ছে আবার কমছে। এ কারণে জেলার চরাঞ্চলে কিছু ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা প্রতি বছরই ভাঙন রোধে বালির বস্তা ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছি বলে তিনি জানান।

মে ২১,২০২২ at ১৫:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আরা/রারি