ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান সৌদি আরব

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরপরই তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার তেল নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। কোভিড-১৯ ও লকডাউনের কারণে তেল উৎপাদন, সরবারহ ও মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হয় তেল কোম্পানিগুলো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর ও রাশিয়ার ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার ফলে লাভের মুখ দেখে সৌদির কোম্পানিগুলো।

তেল সংকটে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তেল উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করে পশ্চিমারা। কিন্তু পশ্চিমাদের এ অনুরোধ অতটা গায়ে লাগায়নি তারা। এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্কের অবনতি সবচেয়ে দায়ী। এ পরিস্থিতিতে চীন-সৌদি সম্পর্ক ও বাণিজ্যের উন্নতি হয়েছে। সৌদি আরবের মন গলাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটিতে সফরের উদ্যোগ নেন এবং সৌদি বাদশাহ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আলোচনাও করেন।

গত ১৫ মে সৌদি আরবের তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো জানায়, ২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ার তালিকাভুক্ত করার পর এ বছরের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে। এ সময়ে রাজস্ব ৮০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

গত ১২ মে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট জানায়, আরামকো বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি হিসেবে পরিণত হয়েছে। শুধু আরামকো নয়, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৌদি কোম্পানি বিপি, এক্সনমোবিল ও শেল বিপুল রাজস্ব আদায় করেছে। এ বছর দেশটিতে তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। গত মার্চে ব্যারেল প্রতি তেল বিক্রি হয়েছে ১৩৯ ডলারে। ব্রেন্ট ক্রুড (অপরিশোধিত তেল) ব্যারল প্রতি এখন ১১০ ডলার; যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বেশি।

আরো পড়ুন: বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি বাড়ানোর সুপারিশ

আর্থিক বাজার তদারকি সংস্থা রিফিনিটিভের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আরামকোর সম্পদের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে টেক জায়ান্ট অ্যাপলের সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বলছে, সৌদি আরামকোর এখন দৈনিক আয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। কোম্পানিটি প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেলের তেল প্রক্রিয়াজাত করছে।

 জ্বালানি কোম্পানি বিপি ও শেল জানিয়েছে, গত এক দশকের মধ্যে তারা রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে। বিপি জানিয়েছে, এ মাসে তাদের রাজস্ব প্রথম তিন মাসের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। শেলও তিন মাসে রেকর্ড রাজস্ব অর্জন করেছে।

আরো পড়ুন: টিকটক করতে গিয়ে বনে আগুন!

তেল উৎপাদনকারীদের সংস্থা ওপেক প্লাস এ মাসে তেল উৎপাদন সীমিত লক্ষ্যে বাড়াতে সম্মত হয়েছে। ওপেক প্লাস জানিয়েছে, রাশিয়া দৈনিক সাত মিলিয়ন ব্যারেল তেল রফতানিকারক দেশ। দেশটি ইউরোপের অনেক দেশে তেলের চাহিদা মেটায়। রাশিয়া যে তেলের চাহিদা মেটাতো তা অন্য উৎপাদক দেশের পক্ষে মেটানো সম্ভব না। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় তারা লোকসানে পড়েছে।

তবে সৌদি আরামকোর তেল উৎপাদনে খাটুনি কম। অল্প খরচে ব্যাপক তেল উৎপাদন করা যায়। কারণ কোম্পানিটি উপকূল থেকে খুব সহজে তেল তুলতে পারে। লাভজনক এই কোম্পানিটিতে সৌদি সরকারের ৯৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত মার্চে আরামকো জানায়, ২০২৭ সাল পর্যন্ত তারা প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল ক্রুড উৎপাদন করবে। বর্তমানে তারা এক কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল ক্রুড উৎপাদন করছে।

মে ১৮,২০২২ at ১৬:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সন/জআ