বেধড়ক পিটিয়ে গায়ে ঢালা হয় মরিচের জল, হাত-পা বেঁধে ফেলা হয় পুকুরে

ছবি: সংগৃহীত

যৌতুকের টাকার জন্য এক পাষণ্ড স্বামী স্ত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে শরীর থেঁতলে দেয়, সারারাত রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখে খাটের সঙ্গে। একটু পানির জন্য ছটফট করলে দেওয়া হয় মরিচের গুড়া মিশ্রিত জল। যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকলে হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই ফেলে দেওয়া হয় বাড়ির সামনে পুকুরে।

এরপর মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সেই রাতেই বোরকা পরিয়ে আনা হয় স্ত্রীর বাবার বাড়িতে। পরে রাতে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার সময় ওই গৃহবধূর গোঙানির শব্দ পেয়ে লোকজন ছুটে এসে স্বামীকে আটক করে পুলিশে দেয়।

শনিবার (১৪ মে) রাত ১১টার দিকে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরশিহারি গ্রামে। রবিবার (১৫ মে) মামলা দায়ের করে স্বামী রফিকুল ইসলামকে (২১) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতিতা গৃহবধূ মোসা. শিউলি আক্তার মো. সাইদুল ইসলামের মেয়ে। সাইদুল বলেন, তিনি একজন রিকশাচালক। ছয়-সাত মাস আগে শিউলিকে নেত্রকোনার সদর থানার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামের লাল চান মিয়ার ছেলে রফিকুলের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় তিনি মেয়ে জামাইকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেন।

আরো পড়ুন: বেড়ায় ছাত্রী ও শিক্ষক নিরুদ্দেশ হওয়া কয়েক ঘন্টার মধ্যে আটক করেছে পুলিশ

শিউলি জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুক হিসাবে তাঁর বাবার কাছ থেকে আসবাবপত্র নয়তো টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। তিনি রিকশাচালক বাবার অক্ষমতার কথা জানিয়ে যৌতুক দিতে পারবেন না বলে স্বামীসহ সকলকে জানিয়ে দেন। এতে সকলেই অসন্তুষ্ট হন।

এদিকে বিয়ের কিছুদিন পর তিনি সন্তানসম্ভবা হন। তারপরও যৌতুকের দাবিতে তাঁর ওপর নির্যাতন চলতেই থাকে। একপর্যায়ে ওষুধ খাইয়ে তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট করা হয়। এ কাজে সহায়তা করে স্বামী রফিকুলের ভাইয়ের স্ত্রী রুমা আক্তার।

তিনি আরও জানান, পুরো শরীরে জ্বলন শুরু হলে শরীরে পানি দিতে চাইলে স্বামী তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বাড়ির সামনের পুকুরে ফেলে দেন। প্রায় পুরো দিন পুকুরে কাটিয়ে দেন। দিনশেষে স্বামী তাঁকে নিয়ে বাবার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের চরশিহারি গ্রামে যান। বাবার বাড়ির সামনে আসতেই তাঁকে ফেলে রেখে দ্রুত ছটকে পড়তে চাইলে তিনি গোঙাতে থাকেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘটনাটি জানার পর পলায়নরত স্বামী রফিকুলকে আটকে থানায় খবর দেয়।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পীরজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, নির্যাতনের পর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মে ১৫,২০২২ at ১৯:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কক/জআ